শিশুরাও সময় বোঝে

সহমর্মিতার সহজাত প্রকাশ শিশুদের 'ত্রাণ'

কখনো সময় আসে, যখন শিশুরাও বুঝতে পারে মানুষের কষ্ট। একটু ভালো থাকা পরিবারের সন্তানই শুধু নয়, একজন ভিখারিও জীবনের জমানো টাকা অনাহারে থাকা মানুষের জন্য উপহার দিয়েছেন। উপহার পাওয়া ৬৫ হাজার টাকা ইউএনওর কাছে তুলে দিয়েছেন মানুষের সাহায্যে। এর পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার উদাহরণ তাঁদের ধনসম্পদের তুলনায় অত্যন্ত কম। এটা খুবই বড় পরিতাপের বিষয়।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মওদুদ হাসান। সে স্কুলে যাওয়ার সময় মা-বাবার দেওয়া টিফিনের টাকা জমাত। সেই টাকা উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছে সে। আরেকটি শিশু পিরোজপুরের। গত সোমবার পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে মাটির ব্যাংকগুলো তুলে দেয় স্থানীয় মিনা শিশুনিকেতনের পাঁচ শিক্ষার্থী। সহমর্মিতার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হলো শিশুর মন। করোনার এই সময়ে তারা যে বড় মনের পরিচয় দিয়েছে, তার জন্য তাদের মা-বাবা ও শিক্ষকেরাও অভিনন্দন পেতে পারেন।

অনেক গ্রামেও স্থানীয় তরুণ কিংবা অবস্থাপন্নরা ত্রাণকাজ চালাচ্ছেন। অনেক সিটি করপোরেশন এলাকায়ও সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত সেবা কাজ চলছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এসব প্রচেষ্টার আওতা ও ক্ষমতা কম। এই জায়গাটিতেই সমাজের ওপরের শ্রেণিগুলো থেকে সহায়তা আসা দরকার। আলিবাবার জ্যাক মা বলেছেন, এখন মুনাফার কথা ভুলে যাও, এখন বাঁচো। ক্রান্তিকালে বাঁচা একা একা হয় না বা আলাদা গোষ্ঠী-সম্প্রদায়গত সুরক্ষাও করোনাভাইরাসটি দেয় না, সেহেতু সামষ্টিক বাঁচা ও বাঁচানোই সবার বাঁচাকে আরও নিশ্চিত করে।

সারা দেশেই ছোট-বড় ভাবে মানুষের চেষ্টা আছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তরুণেরাও সবার সামনে। তাঁদের সমর্থন মোটামুটি মধ্যবিত্তের মধ্যেই বেশি। কিন্তু সেই অনুপাতে দেশের ধনী মানুষেরা ততটা এগিয়ে আসেননি বা নিয়মিত কোনো উদ্যোগ নেই। কিন্তু সে হারে শ্রমজীবী ও অস্থায়ী আয়ের মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। অর্থনীতির মন্দার আঘাত যাদের গায়ে লাগবে, তাদের হাতে এটা মোকাবিলার উপায়টা নেই। এ জন্যই সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা জরুরি হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তা করছে। তবে করোনা-পর্বে বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম ক্ষয়ক্ষতির রাস্তাই নিতে হবে। তার জন্য সমাজের সহায়হীনদের এই সময়টায় সরকারি আয়োজনের পাশাপাশি বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বড় আকারের সহায়তা কর্মসূচির দরকার হয়। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি ও করপোরেশনগুলো ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছে।