তথ্য লুকিয়ে রাখার প্রবণতা বন্ধ হোক

সরকারি–বেসরকারি সংস্থা

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

যে বেসরকারি সংস্থা তথা এনজিওগুলো আন্দোলন করে সরকারকে দিয়ে তথ্য অধিকার আইন পাস করিয়ে নিয়েছিল, তারাই এখন তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের থেকে পিছিয়ে আছে। এটি আমাদের মনগড়া কোনো মন্তব্য নয়; দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গবেষণা করে এই সত্য বের করেছে।

বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির ‘তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ চর্চার মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণায় যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তা বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য মোটেই সুখকর নয়। টিআইবির গবেষণায় ১৯২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। আর ২৫টি নির্দেশকের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গবেষণার সময় ছিল ২০২০ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পদ্ধতি, অর্থায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও আছে। তথ্যের ব্যাপ্তি, প্রবেশগম্যতা ও তথ্যের উপযোগিতা—এই তিন নিরিখে মূল্যায়ন করা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য।

টিআইবি গবেষণার ফলকে সন্তোষজনক, অপর্যাপ্ত ও উদ্বেগজনক—এই তিনভাবে মান নির্ণয় হয়েছে। তাদের মূল্যায়ন হলো, সার্বিকভাবে দেখা যায়, অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান এনজিওর থেকে তুলনামূলক ভালো স্কোর পেয়েছে। অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ডিজাইন ও প্রকাশিত তথ্যের ধরন খুব কাছাকাছি। কিন্তু এনজিওর ক্ষেত্রে এ রকম একক কোনো ডিজাইন-ফরম্যাট দেখা যায় না। এ ছাড়া এখনো এনজিওর ক্ষেত্রে আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো প্রকাশের চর্চা ও দৃষ্টান্তের ঘাটতি লক্ষণীয়।

গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নে যেমন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা ছিল, তেমনি এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নেও তাদের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশিত। আইনটি প্রণয়নের ১১ বছর পর এসে তথ্য পাওয়ার সুযোগ আগের তুলনায় বাড়লেও সার্বিকভাবে তা সন্তোষজনক নয়।

গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত স্কোরের বিন্যাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সন্তোষজনক (৬৭%-এর ওপর) স্কোর পেয়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান, তবে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। অন্যদিকে প্রায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ এনজিওর স্কোর উদ্বেগজনক (০-৩৩%) অবস্থানে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে প্রণীত তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নে বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আইনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও চূড়ান্ত রূপ পায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। আইনের উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি আদায় করা।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় ছাড়া যেকোনো তথ্য জানার অধিকার নাগরিকদের আছে। যেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলো জনগণের কল্যাণে কাজ করে এবং সরকারের কাছে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি দাবি করে, সেখানে নিজেদের কাজেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে। সরকারি-বেসরকারিনির্বিশেষ সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য যত উন্মুক্ত হবে, রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথও সুগম হবে আশা করা যায়।