জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কঠোর সমালোচনা হলেও উত্তর দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর এ অনুপস্থিতির কারণ কী? তিনি কি সংসদে স্বল্প সদস্যের বিরোধী দলের মুখোমুখি হতেও ভয় পান? সংসদীয় ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাব মন্ত্রীকে দিতে হয়। তিনি এ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী। আগের সরকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ফলে একজন অনুপস্থিত থাকলে অপরজন জবাব দিতে পারতেন।
বাজেট অধিবেশনে বাজেট নিয়ে আলোচনা হলেও বেশি কথা হয়েছে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। এমনকি সরকারের একাধিক মন্ত্রীও সংসদের বাইরে এ খাতের ব্যর্থতা-দুর্বলতা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতিবারই অভিযোগ ও সমালোচনা অস্বীকার করেছেন এবং সবকিছু ঠিক আছে বলে সাফাই গেয়েছেন। আর রোববার সমাপনী দিনে তিনি সংসদে অনুপস্থিত থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, এমনটি বলা যাবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংসদে যেসব সমালোচনা হয়েছে, তার মধ্যে গুরুতর হলো সাংসদেরা টেলিফোন করেও তাঁকে পান না। বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের অভিযোগ করেছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বছর আগে যে অবস্থায় ছিল, এখনো সেখানেই আছে। কোনো উন্নতি হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ছয়-সাতবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। মন্ত্রীর সহকারীদের ফোন করার পর মন্ত্রীকে জানানোর কথা বলি। কিন্তু মন্ত্রী ফোন করেন না।’
অভিযোগ গুরুতর। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় আসীন বিরোধী দলের উপনেতাই যদি পাঁচ-ছয়বার টেলিফোন করে মন্ত্রীকে না পান, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে পাবে? মন্ত্রী অস্বীকার করলেও স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম-ব্যর্থতা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। করোনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাস্ক ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, লোকবল নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা অনেকটা প্রমাণিত। গত বছর বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা-ও তারা খরচ করতে পারেনি। এ ব্যর্থতার জবাব কী।
ব্যর্থতার জন্য যখন বিরোধী দলের সাংসদেরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন, তখন বাস্তব অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। যেদিন সংসদে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়, তার পরদিন প্রথম আলোর খবর ছাপা হয়, ‘৫২% হাসপাতালে আইসিইউ নেই।’ তাহলে এক বছর ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করেছে? আইসিইউ না থাকলে গুরুতর আক্রান্ত করোনা রোগীদের চিকিৎসা কীভাবে হবে? আবার আইসিইউ থাকলেও হবে না; সেখানে অক্সিজেন সরবরাহও নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা ও বগুড়ায় অক্সিজেনের অভাবে ১২ জন রোগী মারা গেছেন।
এ রকম আরও কতজন মারা গেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নীরবতা ভাঙবেন? সাংসদ তথা জনগণের প্রশ্নের জবাব দেবেন? মন্ত্রীর কাজ অর্পিত দায়িত্ব নিজে যথাযথভাবে পালন করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তা করতে বাধ্য করা। সাংসদেরা জেলা হাসপাতাল তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন না বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন। যেসব সাংসদ দায়িত্ব পালন করছেন না, মন্ত্রীর উচিত তাঁদের নামও প্রকাশ করা।
মন্ত্রী সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন, সাংসদ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নালিশ জানাবেন, এ বাগ্যুদ্ধ দেশবাসী দেখতে চায় না। ব্যর্থতার দায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিতেই হবে।