পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না

শূন্য পদ ও উত্তপ্ত ক্যাম্পাস

এই মুহূর্তে দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পক্ষের ও বিপক্ষের শিক্ষকেরা মুখোমুখি অবস্থানে—এ তথ্যই বলে দেয়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেমন চলছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ শূন্য আছে ছয় মাস ধরে। সম্প্রতি সেখানে রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষের পদও শূন্য হয়েছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর ও পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন। উপাচার্য ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছে কয়েক মাস ধরে। সেখানে শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। অন্যদিকে, উপাচার্যের পদত্যাগ প্রশ্নে শিক্ষকদের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একাংশ উপাচার্যের পদত্যাগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, অপরাংশ তাঁর পক্ষে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রভাষক পদে একজন চাকরিপ্রার্থী। এ-সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তিন শিক্ষক এর ওপর মন্তব্য করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়। এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে তিন শিক্ষকের কারণ দর্শানো নোটিশ প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, উপাচার্যকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান, পরীক্ষার মান উন্নয়ন ফি কমানো, ছাত্র-শিক্ষকদের গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, খেলার মাঠ উন্নয়ন ও শহীদ মিনার স্থাপন। স্থানীয় সাংসদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়ে গেছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।

পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে থাকার দাবি জানিয়েছেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক। তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন, এটি অন্য কোনো দেশে চিন্তাও করা যায় না। অথচ শুধু পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন। উত্তরাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বেশির ভাগ সময়ে ঢাকায় থাকেন বলে অভিযোগ আছে। অন্যদিকে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অচলাবস্থা
চলছে।  গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অক্টোবরের গোড়ার দিকে উপাচার্য পদত্যাগ করলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কাউকে পদায়ন করা হয়নি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং ও গণরুম সংস্কৃতির যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা ভয়ংকর। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অনাচার চললেও কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। অথচ গণরুম সংস্কৃতির শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসনসংকট থেকে মুক্তি পেতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন, তাতে ডাকসুর একজন নির্বাচিত প্রতিনিধিও ছিলেন। এভাবে দেশের শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষালয়—কোনোটাই চলতে পারে না। সরকার একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেও সেগুলো ঠিকমতো চলছে কি না, সেসব বিষয়ে ন্যূনতম তদারকি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম তদারক করার কথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। কিন্তু সুপারিশ করা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কোনো ক্ষমতা নেই। এ কারণে পাবলিক কিংবা বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের কথা আমলে নেয় না। আর উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, সেই মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ–আয়োজন মৌখিক আশ্বাসের মধ্যে সীমিত।

সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ ও সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শূন্য পদে নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।