পর্যায়ক্রমে শ্রেণিকক্ষে ফেরা শুরু করতে হবে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

করোনার কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়া শিক্ষাজীবনকে স্বাভাবিক করতে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরপর পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের সব শ্রেণিতে ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। গত বছর আটকে থাকা এইচএসসির মূল্যায়নের ফলও প্রকাশ করা হবে জানুয়ারিতেই।

সরকার শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। ভালো না হলে খুলবে না। গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে এবং চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এসএসসি ও সমমানের পাঠ্যসূচি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে। এর ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করিয়ে জুন নাগাদ পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে। একইভাবে পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে নেওয়া হতে পারে। এসব পরীক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করা যায়নি। এ জন্য এখন পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরবর্তী স্তরে যাওয়ার জন্য যেসব বিষয় অত্যাবশ্যকীয়, সেগুলো মাথায় রেখে কাটছাঁট করে এ পাঠ্যসূচি করা প্রয়োজন।

গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলেও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়নি করোনার কারণে। পরীক্ষা ছাড়া তাঁরা সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন, যদিও ফলের ক্রম নির্ধারিত হবে পূর্ববর্তী এসএসসি, জেএসসির পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে। এবার এইচএসসি ও সমমানের মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন না।

প্রায় এক বছর শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকার পর শিক্ষার্থীদের পক্ষে পরবর্তী ধাপের পাঠ নেওয়া কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শিক্ষকদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। প্রয়োজনে ছুটির দিনেও ক্লাস নিতে হবে। শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ প্রাথমিক নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা সবচেয়ে কম ভাবেন। সেখানে মেধাবী শিক্ষক নেই। অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। নেই শিক্ষার আনুষঙ্গিক সরঞ্জামও। শিক্ষার্থীরা নিচের শ্রেণিতে ঠিকমতো পাঠ গ্রহণ করতে না পারলে ওপরের শ্রেণিতেও দুর্বল থাকবেই।

সরকারের পরিকল্পনাকে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাঁরা বলেছেন, পরিকল্পনা নিলেও হবে না, এর বাস্তবায়নেও যথাযথ প্রস্তুতি থাকতে হবে এবং তদারকি বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে ভালো ভালো পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু পরে সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গাফিলতির কারণে। শিক্ষার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যেন তা না হয়।

করোনা যত প্রলম্বিত হোক, শিক্ষা কার্যক্রম আর বন্ধ রাখা চলে না। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন করোনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে এবং হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার ক্ষেত্রেও তেমন চেষ্টা করতে হবে। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার প্রতি যথাযথ গুরুত্বও দিতে হবে।