শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের (মাদকসেবন করেন কি না পরীক্ষা করা) আওতায় আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে, যাঁদের কাজ হবে ডোপ টেস্ট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, এর মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে পুরোনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানি করা হয়েছে কি না। অথবা এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবমাননাকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া হবে কি না। যেভাবে সারা দেশ মাদকের ছোবলে রক্তাক্ত হচ্ছে, সেখানে এ প্রশ্ন অমূলক। বরং এর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠানটির সুনাম রক্ষার উদ্যোগই নিয়েছে। যত অপ্রিয়ই হোক না কেন, সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে।

কয়েক মাস আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দায়ের কোপে আত্মঘাতী হয়েছেন, যিনি ভয়ংকর মাদক এলএসডিতে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ক্যাম্পাসের বাইরে ও ভেতরে এ রকম আরও বহু বেদনাদায়ক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তাই সমস্যা কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। সমস্যা স্বীকার করেই সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে।

সারা দেশে যেভাবে মাদকের বিস্তার ঘটে চলেছে, তাতে সব উচ্চশিক্ষালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডোপ টেস্ট জরুরি হয়ে পড়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিট ও বিভাগের সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’ করে ২৬ জনের শরীরে মাদকের উপাদান পাওয়া যায়। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মাদকাসক্ত পুলিশের সদস্য শনাক্ত হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ বিভাগে চাকরি নিতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডোপ টেস্ট দিতে হবে। গত রোববার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বছরে একবার ডোপ টেস্টের পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও ডোপ টেস্টের তাগিদ দেওয়া হয়।

সে ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধান্তটি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই। তবে ডোপ টেস্ট মাদক নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় মাত্র। মাদকের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে এর আসার পথ রহিত করতে হবে। মাদক চোরাচালান ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ধরে কাউকে ছাড় দেওয়ার নীতি পরিহার করতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও ডোপ কমিটির আহ্বায়ক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রতিবছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করা হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বর্ষের শিক্ষার্থীদের একবার ডোপ টেস্ট করানো যেতে পারে। সমস্যা হলো ডোপ টেস্ট করার সক্ষমতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে সেই সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।

ধারণা করি, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ক্যাম্পাসে মাদকসেবীর প্রবেশ রহিত করতে চায়। প্রত্যাশা থাকবে অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও দপ্তর মাদকমুক্ত রাখতে উদ্যোগী ভূমিকা নেবে। কিন্তু গোটা দেশ মাদকমুক্ত রাখতে হলে বাইরে থেকে মাদক আসা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এবং কাজটি করতে হবে সরকারকেই।