শহিদ ইসলামের শূন্য পদ

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

রাজনীতি না করেও একজন ব্যক্তি যে জাতীয় সংসদের সদস্য হতে পারেন, তার প্রমাণ শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল। গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের একটি আদালত শহিদ ইসলামকে মানব পাচার ও মুদ্রা পাচারের দায়ে চার বছরের কারাদণ্ড এবং বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। শহিদ ইসলাম বর্তমানে কুয়েতের কারাগারে আটক আছেন।

বাংলাদেশের একজন সাংসদ বিদেশের আদালতে দণ্ডিত এবং কারাগারে আটক আছেন, এটি যেমন দেশের জন্য অপমানকর, তেমনি জাতীয় সংসদের জন্যও। দণ্ডিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সাংসদ পদ হারিয়েছেন—আইন বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত দিলেও সংসদের স্পিকার বিষয়টি সে সময়ে আমলে নেননি। তিন সপ্তাহ পর গত সোমবার জাতীয় সংসদ সচিবালয় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলের সদস্যপদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। জাতীয় সংসদের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে আসনটি শূন্য বলে বিবেচিত হবে। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্য নন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুয়েতের আদালতের রায় সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছায় বলে জানানো হয়। কিন্তু আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করার প্রয়োজন ছিল না। কুয়েতের আদালতের রায়ের খবর দেশ–বিদেশের সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সংসদ সচিবালয় চাইলে রায়ের কপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে অনেক আগেই সংগ্রহ করতে পারত।

হলফনামায় শহিদ অসত্য তথ্য দিয়েছেন, এই অভিযোগ এনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া গত বছরের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট করেছেন। কোনো প্রার্থী হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার কথা। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে করা মামলায় সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামের (পাপুল) স্ত্রী সাংসদ সেলিনা ইসলাম ও তাঁদের মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধেও দুদকের মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।

রাজনীতি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন শহিদ ইসলাম, যিনি বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত, কীভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচিত হলেন, তার কিছু কিছু তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, শহিদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম রাজনীতি বা ভোটের জোরে নয়, টাকার জোরে নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে তিনি বঞ্চিত হলেও কোনো কোনো নেতার আশীর্বাদ পুরোটাই পেয়েছেন। নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সরে দাঁড়ানো এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে তাঁর (শহিদ ইসলাম) প্রতি সমর্থন জানানোর নির্দেশনার পেছনে কিসের জোর ছিল, তা–ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

রাজনীতিতে নীতিনৈতিকতায় ধস নেমেছে, এ কথা সবার জানা। তাই বলে একজন চিহ্নিত মানব পাচারকারীকে জাতীয় সংসদে ‘নির্বাচিত’ করে আনতে হবে? তাহলে মহান জাতীয় সংসদের মর্যাদা কোথায় থাকল? বিদেশের আদালতে দণ্ডিত শহিদ ইসলাম আমাদের জাতীয় সংসদকে অপমান করেছেন। টাকার জোরে তাঁর নির্বাচিত হওয়ার কাজে যঁারা সহযোগিতা করেছেন, তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত সংসদের পবিত্রতা ও শুদ্ধতার স্বার্থে।