শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ভবনের যে সচিত্র প্রতিবেদন প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, সেটি ব্যতিক্রম ঘটনা ভাবার কোনো কারণ নেই। দেশের সব না হলেও অধিকাংশ হাসপাতালের অবকাঠামো দুর্বল। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো নড়বড়ে—এটি সর্বজনবিদিত। এসব কেন্দ্রে চিকিৎসাপ্রার্থীর সংখ্যাও কম। সে ক্ষেত্রে মানুষ জেলা সদরের চিকিৎসালয়গুলোর ওপরই ভরসা রাখে। কিন্তু সেখানেও যদি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, তাহলে সেবাপ্রার্থীরা কোথায় যাবে?
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের নিচতলার কিছু বিম ও স্ল্যাবে ফাটল সৃষ্টি হয়। গত রোববার তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। এতে কক্ষে থাকা কম্পিউটার ও বিভিন্ন আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা হাসপাতালটির ভবন পরিদর্শন করে নিচতলার ছয়টি কক্ষ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
৩৫ বছর আগে গণপূর্ত বিভাগ হাসপাতালের প্রথম তলার ভবনটি নির্মাণ করে। পরে ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ওই ভবন দোতলা ও তিনতলায় উন্নীত করে।
ওই হাসপাতালে এটাই প্রথম দুর্ঘটনা নয়, গত পাঁচ বছরে চার দফা বিভিন্ন ফ্লোরের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়েছে। ২০১৮ সালে নিচতলার করিডরে ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে তিন ব্যক্তি আহত হন। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবনের নিচতলায় বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, তত্ত্বাবধায়ক, আরএমওর কক্ষ, এক্স-রে কক্ষ, ল্যাবরেটরি ছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ করার কক্ষ রয়েছে। ছয়টি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে জেলা শহরে ৩০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। ১৯৯০ সালে তা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে ২০০৩ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৮৫ সালে ভবনের এক অংশ একতলা ও আরেক অংশ দোতলা করা হয়। বিএনপির আমলে স্থানীয় সাংসদ এ হাসপাতাল নির্মাণকাজের ঠিকাদারি পেয়েও দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখেন। তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রশাসন কিছু বলেনি। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের কাজ দ্রুত শেষ করেন, যার মান ছিল খুবই খারাপ।
সাবেক সাংসদের নিম্নমানের কাজের খেসারত দিতে হচ্ছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবাপ্রার্থীদের। এবার যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক নজরদারি ও তদারকি দরকার। শিগগিরই হাসপাতালের ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষগুলো মেরামত করা হোক। বন্ধ হোক জনগণের জন্য তৈরি হাসপাতাল নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয়।