সিলেটের হবিগঞ্জে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের তৎপরতা চলে আসছে বহু বছর ধরে। যারা এসব করছে, তারা হয়তো জানে না যে তাদের জন্য অর্থকরী এ কাজের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের কী অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু সরকারের জানার কথা। তবু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোও বিষয়টির প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না।
হবিগঞ্জের যেসব টিলাভূমিতে চা ও রাবার চাষ করা হয়, সেগুলোর ভৌত গড়ন পুরো অঞ্চলটির ইকোসিস্টেমের অবিচ্ছেদ্য অংশ। টিলাগুলোর মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে অপরিসর ঝরনার মতো প্রাকৃতিক স্রোতোধারা, যেগুলোকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ছড়া। সেগুলো বেয়ে টিলার উঁচু অংশগুলো থেকে বৃষ্টির পানি নিচের দিকে বয়ে যায়। ফলে টিলার ভূমিতে চা ফলানোর স্বাভাবিক উপযোগিতা বজায় থাকে। ছড়াগুলোর দুই পারের মাটি বালুকাময়। সেই বালু বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সিলিকা বালু, যা খনিজ পদার্থের তালিকাভুক্ত। সে কারণে তা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। খনিজ সম্পদ হিসেবে সিলিকা বালু আহরণের অনুমোদন খনিজ সম্পদ বিভাগ দিয়ে থাকে লিজের মাধ্যমে। স্থানীয় প্রশাসনও বালু তোলার জন্য লিজ দেয়। এভাবে সরকারি অনুমোদনেই ছড়াগুলোর বালু তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে ছড়া কেটে বালু তোলা শুধু সরকারি অনুমোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; অনুমোদন ছাড়াই সম্পূর্ণ অবৈধভাবেও একই কাজ চলে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে। ফলে ছড়াগুলোর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক চেহারা ও বৈশিষ্ট্য বদলে গেছে। সেগুলো চওড়া হয়েছে এবং নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে টিলাগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে, সেগুলো ধসে যাচ্ছে, ভেঙে পড়ছে। আর সে কারণে টিলাগুলোর ভেতর দিয়ে নির্মিত সড়কগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ছে। অনেক স্থানে ছড়ার উভয় পাশের কৃষিজমি এবং চা-বাগানের জমি কেটেও বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে সেগুলোর আশপাশের ঘরবাড়ি-বসতভিটার জন্যও ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এভাবে ছড়াগুলোর উভয় পাশ কাটতে কাটতে এখন আর সেখানে সিলিকা বালু নামের খনিজ সম্পদটির কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। লোকজন ছড়াগুলোর দুই পাশের মাটি-বালু কেটে তুলে নিয়ে যাচ্ছে মূলত নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য।
সুতরাং টিলাভূমির ইকোসিস্টেম ধ্বংসকারী এ তৎপরতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা একান্ত জরুরি। কিন্তু খনিজ সম্পদ বিভাগ, সেখানে সিলিকা বালু না থাকা সত্ত্বেও বালু তোলার জন্য লিজ দিয়েই যাচ্ছে। এটা প্রথমেই বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনেরও একই কর্তব্য। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে, তার উত্তরগুলো গৎবাঁধা হবে, এতে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। আমরা ছড়া কেটে বালু তোলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।