উপকূলে মিষ্টি পানির সরবরাহ নিশ্চিত করুন

লবণাক্ততার বিরূপ প্রভাব

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। ফলে ওই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ যে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে, জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে এবং অনেকের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—এ তথ্যও পুরোনো। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক গবেষণায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ২০ শতাংশ নারী লবণাক্ততার কারণে অকালগর্ভপাতের শিকার হন বলে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক।

উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বন্ধে পাকিস্তান আমল থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে বেড়িবাঁধ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সিডর ও আইলার পর অনেক স্থানেই সেই বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য অনেকে বাঁধ কেটে ঘের এলাকায় লবণপানি ঢুকিয়ে থাকেন। এতে গুটিকয়েক চিংড়িচাষি লাভবান হলেও এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দার জীবন-জীবিকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ লবণের প্রয়োজন এবং সেটি আসে খাদ্য ও পানি থেকে। কিন্তু উপকূলীয় এলাকার পানিতে লবণের পরিমাণ অনেক গুণ বেশি। এই পানি শরীরে প্রবেশ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য তা হয়ে ওঠে আরও বেশি বিপজ্জনক। গর্ভাবস্থায় নারীরা বেশি লবণাক্ত পানি খেলে খিঁচুনি ও উচ্চ রক্তচাপ হয়। এ কারণে নারীদের গর্ভাবস্থায় সন্তান মারা যাওয়ার হারও বেশি, যা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় বলা হয়, লবণাক্ততার কারণে উপকূলের নারীরা শুধু অকালগর্ভপাতেরই শিকার হন না, ৩ শতাংশ শিশুও মারা যায়। এ ছাড়া বেশি লবণ খাওয়ার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক রয়েছে, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি উপকূলের মানুষ কম লবণাক্ত পানি (যেমন বৃষ্টির পানি) পান করে, তাহলে তাদের রক্তচাপ কমিয়ে আনা সম্ভব। খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে আসা ১ হাজার ২০৮ জন গর্ভবতী মায়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুধু নলকূপের পানি পান করা মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ বেশি। এই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে সুরক্ষা দিতে হলে সুপেয় ও মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করতে হবে। বড় বড় পুকুর খনন করে এবং বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সেটি করা যায়। কিন্তু ওই অঞ্চলের মানুষ এতটাই দরিদ্র যে তাদের পক্ষে পুকুর খনন বা বৃষ্টির পানি দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়।

অতএব, সরকারি উদ্যোগেই পুকুর খনন ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা তথা গর্ভবতী মায়েদের অকাল গর্ভপাত বন্ধ করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকবে না কেন?