টহল ও অভিযান জোরদার করা হোক

রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সম্প্রতি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত চার স্কুলছাত্রকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করেছে—এটা স্বস্তির খবর হলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির ঘিরে যে সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত আছে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে ১৪টি সন্ত্রাসী সংগঠন আছে, যারা শিবিরের ভেতরে ইয়াবা ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে। শিবিরের বাইরে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোপন সন্ত্রাসী আস্তানা আছে।

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ১৯৯১ সালে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে এবং টেকনাফের হ্নীলায় দুটি করে মোট চারটি শিবির ছিল। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের পর টেকনাফে আরও ৬টি এবং উখিয়ায় ২৪টি আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। এসব শিবিরে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। এই সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট ও দোকানে কাজ করেন—এমন রোহিঙ্গাদের যোগসাজশ আছে, যাঁরা গুম, অপহরণ ও মাদক ব্যবসায় জড়িত।

সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সোনার পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের যে চার স্কুলছাত্র অপহৃত হয়েছিল, তাদের সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্থানীয় একটি রিসোর্টে চাকরিরত ইব্রাহিম ও জাহাঙ্গীর নামের দুই রোহিঙ্গা। হোটেলে চাকরির সূত্রেই তাঁদের সঙ্গে ওই চার স্কুলছাত্রের পরিচয় হয়। অপহরণের শিকার এক শিক্ষার্থী বলেছে, পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকটি আস্তানা আছে। পুলিশের হাতে যাতে অপহরণকারীরা ধরা না পড়ে, সে জন্য তাদের বিভিন্ন আস্তানায় রাখা হয়েছে। গত নভেম্বরেও এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করেছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। পরে তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

স্কুলছাত্র অপহরণের সঙ্গে জড়িত পাঁচ সন্ত্রাসী ধরা পড়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। তিনটি ব্যাটালিয়নে বিভক্ত তাদের সদস্যসংখ্যা ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০। শরণার্থীশিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ। এর বাইরেও অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী লোকালয়ে মিশে গেছে। এই রোহিঙ্গাদের অনেকেই ইয়াবা, অস্ত্র ও সোনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, যা প্রতিরোধ করা সীমিতসংখ্যক এপিবিএন সদস্য দ্বারা সম্ভব নয়। আবার অবৈধ ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীরাও জড়িত। তাঁরা এসব ইয়াবা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করে দেন।

আরও উৎকণ্ঠার বিষয় বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে তৎপর। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় তারা জড়িও বলে অভিযোগ আছে। মুহিবুল্লাহর হত্যার এক মাসের ব্যবধানে সেখানে ছয় সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে খুন, অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ অপরাধমূলক তৎপরতা রুখতে হলে সেখানে আরও বেশিসংখ্যক এপিবিএন সদস্য নিয়োগ করতে হবে। শিবিরের ভেতরে সব সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। বাড়াতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও অভিযান। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সব গোপন আস্তানা উচ্ছেদ করতে হবে। যারা বাইরে থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছে, আইনের আওতায় আনতে হবে তাদেরও।