রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর দায় নেওয়ার কেউ নেই। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে মৃত্যুর মিছিল তাই থামানো যায় না। গত সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাজির মোড় রেলক্রসিংয়ে ভটভটিতে ট্রেনের ধাক্কায় তিনজন নিহত হন। এ ঘটনার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে ওই রেলক্রসিংটিসহ আরও একটি রেলক্রসিংয়ে বাঁশের বার বসানো হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সোমবারের দুর্ঘটনার পর পৌরসভার মেয়র অস্থায়ীভাবে বাঁশের বার বসানোর নির্দেশ দেন। রেল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে স্থায়ীভাবে গেট নির্মাণ ও পরিচালনা না করা পর্যন্ত পৌরসভার নিয়োজিত লোক স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে গেট পরিচালনা করবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার এ উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা তারা না হওয়ায় রেলক্রসিংয়ে নিয়মিত তদারক করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
২১ ডিসেম্বর ২০২১, প্রথম আলোয় ‘রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা: মৃত্যুর দায় নেই, শাস্তি হয় না’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সারা দেশের রেলক্রসিংয়ের ৮২ শতাংশই অরক্ষিত। এসব ক্রসিংয়ে ট্রেন চলার সময় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেই। পাহারাদারও নেই। এ কারণে রেলক্রসিং যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ছয় বছরে ট্রেন দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়েছে, এর ৮৩ শতাংশই মারা গেছে রেলক্রসিংয়ে।
রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে মোট রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৬১। এগুলোর মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩২১টির। এসব ক্রসিংয়ের বেশির ভাগই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কে। আরও আছে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়কে। সরকারের কমবেশি পাঁচটি সংস্থা রেললাইনের ওপর সড়ক নির্মাণ করার কারণে রেলক্রসিং সৃষ্টি হয়েছে। রেলের নিজেদেরও রেলক্রসিং আছে। রেলসহ এই সরকারি সংস্থাগুলো গত এক দশকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু রেলক্রসিং সুরক্ষায় কেউ দায়িত্ব নেয়নি। বরং দায় চাপিয়েছে একে অপরের। ফলে একের পর এক রেলক্রসিংয়ে মানুষ মারা গেলেও কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না।
রেলের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৫ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জনই প্রাণ হারিয়েছেন রেলক্রসিংয়ে। এগুলো নিছক দুর্ঘটনা নয়, কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ। যে সংস্থার হাতে সড়ক নির্মাণ হোক না কেন, রেলকে কেন্দ্রে রেখে তদারকির দায়িত্ব অবশ্যই সমন্বয় করতে হবে। অবহেলাজনিত এ মৃত্যুর মিছিল থামাতে হবে।