দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

রাজউকের ৫১ অভিযুক্ত

অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু তদন্তের ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই আমরা জানতে পারি না। সেদিক থেকে এফ আর টাওয়ার দুর্ঘটনার তদন্তে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হিসেবে ৫১ জনকে চিহ্নিত করা এবং সংবাদ সম্মেলনে তা প্রকাশের ঘটনা বিরল। বলা যায় একটি উত্তম দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউক। বিশেষ করে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করা একটি নতুন উদাহরণ তৈরি করল। এখন আমরা এটা জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কত তাড়াতাড়ি এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

গণপূর্তমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ, রাজউকে বেশির ভাগ কর্মকর্তা প্রেষণে এসে থাকেন। সুতরাং আমরা আশা করব, গণপূর্তমন্ত্রী জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার যে নতুন ধারাটি শুরু করলেন, তা যেন সবার সহযোগিতায় আরও বেগবান হয়। আমরা এখন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের তরফে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কখন কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আশা করব। দুদক গঠিত এফ আর টাওয়ার তদন্ত কমিটির এখন উচিত হবে, প্রকাশিত দুটি তদন্ত রিপোর্টে যদি কোনো দুর্নীতির বিষয় বাদ পড়ে থাকে, তা অন্তর্ভুক্ত করা। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

তবে এটা মনে রাখতে হবে, ২৬ জনের মৃত্যু ও ৭০ জনের আহত হওয়ার বিনিময়ে এফ আর টাওয়ার নির্মাণের জাল-জালিয়াতি উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। আরও অনেক ভবনেই এ ধরনের জালিয়াতি ঘটেছে এবং তা চাপা পড়ে আছে। সুতরাং বিল্ডিং কোড, ফায়ার কোড ইত্যাদি না মানার যে সংস্কৃতি আমরা সমাজে গড়ে তুলেছি, তার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতেও আমাদের নতুন করে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। বহুতল ভবন নির্মাণ ও নির্মাণ-পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

ছয়তলার ওপরে রাজউক এলাকায় সুউচ্চ ইমারত রয়েছে প্রায় সাত হাজার। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন যে এসব ইমারতের মধ্যে এমন অন্তত এক হাজার সুউচ্চ ইমারত থাকতে পারে, যার অবস্থা কমবেশি এফ আর টাওয়ারের তদন্তে বেরিয়ে আসা জাল-জালিয়াতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এফ আর টাওয়ারের মতো বিপর্যয় হওয়ার পরেই কি শুধু তদন্ত এবং তার ফলাফলের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রাসঙ্গিকতা পাবে? নাকি আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে? আমরা মনে করি, এই তদন্ত দুটির ওপর ভিত্তি করে এখনই বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

এখন রাজউকের উচিত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ তলা ভবনের ওপরে যত ভবন রয়েছে, তার সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভবন যাচাইয়ে তিনটি কমিটি করেছে। এ ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে এখনই একটি উপযুক্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আইনকানুনের প্রতিটি শর্ত পূরণের অনুরোধ জানিয়ে ইমারত মালিকদের চিঠি দেওয়া হোক। প্রতি তিন মাস পর রাজউকের যাচাই কমিটি তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারে। রাজউক নকশা অনুমোদনকারী স্থপতিদের নাম তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা শুরু করেছিল। কিন্তু দেখা গেছে, যে স্থপতি দুটি নকশায় সই করেছিলেন, তাঁর নামে ৫০টি নকশার অনুমোদন রয়েছে। রাজউকে অনিয়ম কোন মাত্রায়, তা পরিষ্কার। স্থপতি ইনস্টিটিউট ওই ঘটনার প্রতিবাদ করার পর রাজউক ওয়েবসাইটে আর নথি প্রকাশ করছে না। এটা দ্রুত চালু করা হোক।