পর্যটনের নামে একের পর এক সরকারি প্রকল্পে ধ্বংসের মুখে মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য। এখন সেখানকার সংরক্ষিত বনভূমি লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে বন বিভাগ। অথচ এমন বনভূমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ, এমনকি প্রবেশও নিষেধ। সেটির ৫ হাজার ৬৩১ একরজুড়ে ৯৮০ কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় ধরে ওই সাফারি পার্ক নির্মিত হবে। এতে গড়ে উঠবে পর্যটকদের জন্য অবকাঠামো, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, উপকেন্দ্রসহ ভারী স্থাপনা। প্রতিবছর সমাগম ঘটবে ৮ থেকে ১০ লাখ দর্শনার্থী। মৌলভীবাজারে সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনভূমি লাঠিটিলা। অথচ সাফারি পার্কের নামে সেটি ধ্বংসের কারবারে নেমেছে বন বিভাগ।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পর্যটকের সমাগমের কারণে মৌলভীবাজারের বর্শিঝোড়া ইকোপার্ক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক, মাধবকুণ্ড লেক, বাইক্কার বিলসহ আরও পর্যটনকেন্দ্রের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। সেখানে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, রাস্তাসহ নানা অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এখন একমাত্র লাঠিটিলা বনভূমিটি অপেক্ষাকৃত ভালো আছে। যেটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের এলাকায়। স্থানীয় লোকজন জানাচ্ছেন, নিজ এলাকায় উন্নয়নকাজের অংশ হিসেবে ওই সাফারি পার্কটি করতে চাইছেন মন্ত্রী। তাই যদি হয়ে থাকে, বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। পার্কটির সম্ভাব্যতা যাচাই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক বন সংরক্ষক তপন কুমার দে। যাঁর নামে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের শেষ নেই। এর জন্য গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি।
বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনভূমিটিতে সাফারি পার্ক হলে সব বন্য প্রাণী অন্যত্র পালিয়ে যাবে, পুরো বনটিও ধ্বংস হয়ে যাবে। জেলা সদরের ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ নেছার আহমদও এমনটি মনে করেন। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জানালেন, লাঠিটিলা হচ্ছে চিরহরিৎ বনভূমি। এ ধরনের বনাঞ্চল একবার ধ্বংস হলে প্রাকৃতিকভাবে সেখানে আর গাছ জন্মায় না। বন্য প্রাণীরাও এমন বনভূমিকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ আশ্রয় মনে করে।
অন্য বনভূমিগুলোতে ইতিমধ্যে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠায় মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণীদের জন্য লাঠিটিলাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা এখন। জেলা সদরের কাছেই বর্শিছড়ায় একটি ইকোপার্ক করে ফেলে রাখা হয়েছে। এরপরও ৬০ কিলোমিটার দূরে অপ্রতুল যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামোহীন জায়গায় প্রায় হাজার কোটি টাকায় নতুন করে সাফারি পার্ক করার মানে হয় না।
পর্যটনের নামে প্রাকৃতিক সম্পদ উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু পরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থাপনার কিছুই গড়ে তোলা হয় না। যার ভুক্তভোগী লাউয়াছড়া, বিছনাকান্দি, রাতারগুল থেকে শুরু করে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত। সরকারের বিপুল অর্থ খরচ করে পর্যটনের নামে পরিবেশবিধ্বংসী আর কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নয়। লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধ হোক।