বন, নদী ও প্রকৃতি ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের হিড়িক পড়েছে যেন দেশে। এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ বা পদক্ষেপকেই আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি তুরাগ নদ ও বুড়িগঙ্গা নদীর জায়গা দখল করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খবরের পর সামনে এল একইভাবে মেঘনা নদী দখলের চিত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের চোখের সামনে নদী দখল করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে, এমনকি বিঘ্ন হচ্ছে নৌযান চলাচল। একটা নদীকে ধ্বংস করতে এর চেয়ে বড় নমুনা আর কী হতে পারে।
গতকাল প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) মেঘনা নদীর তীরভূমি দখল করে দেয়াল নির্মাণ ও বালু ভরাট করেছে। এ অবৈধ স্থাপনা নিজেদের খরচে সরিয়ে নিতে গত ২২ জুন এপিএসসিএলকে নির্দেশ দেয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এপিএসসিএল এ নির্দেশ না মেনে উল্টো মেঘনার তীরের আরও তিন-চার একর জায়গা দখল করে নিয়েছে। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নিলে জেলা প্রশাসন, পাউবো, বিআইডব্লিউটিএ ও আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে কমিশন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এর জন্য লকডাউনের দোহাই দেওয়া হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতেও নদী ভরাট করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। এরপর সে মাসেই কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে; যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। স্যাটেলাইট ইমেজেও দেখা যায়, ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে ওই জায়গায় নদীর পানি ছিল এবং নিয়মিত প্লাবিত হতো। ২০২১ সালে এসে দেখা গেছে, সেটি এখন ভরাট হয়ে গেছে। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই সেই জায়গা ভরাট করেছে এপিএসসিএল। কমিশন, পাউবো, পরিবেশ ও বিআইডব্লিউটিএরও কোনো অনুমতি নেয়নি তারা। কমিশন পরিদর্শনে গিয়ে যে জায়গা খালি দেখতে পায়, সেটিও পরে ভরাট করে ফেলা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে আশুগঞ্জ নদীবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন পাঁচ শ পরিবারের একটি গ্রামকেও রক্ষা করা যাবে না। এত সব অনিয়মের মধ্যে কীভাবে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠছে, সেটিই এখন প্রশ্ন। কেন এপিএসসিএলকে থামানো যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসক বলেছেন, এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু সেটা কখন করা হবে? কালক্ষেপণ করে কেন এপিএসসিএলকে নদী দখলের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।