দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নিন

মির্জাপুরের ঝুঁকিপূর্ণ সেতু

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কদিম ধল্যা-বাসাইল সড়কে ভাতকুড়া এলাকায় খালের ওপর থাকা সেতুটি যে দ্রুত সংস্কার করা দরকার, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কবে বুঝবে? সেতুর মধ্যখানে বড় একটি গর্তের সৃষ্টি হয়ে ছয় মাস ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। অথচ তা মেরামতের কোনো উদ্যোগই নেই।

গত রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের প্রায় ১০ বছর পর সেতুটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু সংস্কারের কিছুদিন যেতে না যেতেই সেতুতে গর্তের সৃষ্টি হয়। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় গর্ত মেরামত করেন। এরপর আরও দুবার গর্ত মেরামত করেন স্থানীয় লোকজন। প্রায় ছয় মাস আগে সেতুতে পুনরায় গর্ত সৃষ্টি হলেও এখন তা মেরামত করতে কেউই এগিয়ে আসছে না। অথচ প্রতিদিন এই সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হালকা ও ভারী সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

অবশ্য শুধু এই সেতুই নয়, দেশের আরও বহু স্থানে বহু সেতু এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দিনের পর দিন সংস্কার হচ্ছে না। বড় বড় অনেক প্রকল্প হচ্ছে, অনেক অর্থ খরচ হচ্ছে। সেগুলোর প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু মানুষের প্রাত্যহিক চলাচল ও জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত যে উন্নয়ন কার্যক্রম, তা কী করে উপেক্ষিত থাকে! এই যে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটে, তবে এর দায়
কে নেবে?

শুধু সেতু নির্মাণ করলেই চলে না, এর রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন করে তৈরির বিষয়টিও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশ। নিয়মিত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশের বহু সেতুর আয়ুষ্কাল যেমন কমছে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর ‘ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ’ বা ‘ভারী যান চলাচল নিষেধ’, এমন সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করে তাদের দায়িত্ব শেষ। এখানে জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।

নিয়ম অনুযায়ী, ১ হাজার ৫০০ মিটার বা ততোধিক দৈর্ঘ্যের সেতুর দায়িত্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের। এর চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগ বা সওজের। আর গ্রাম এলাকার রাস্তা তৈরি এবং গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। এসব কর্তৃপক্ষকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সেতুগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি জোরদার করতে হবে।

আমরা আশা করব, মির্জাপুরের সেতুসহ দেশের সব ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।