বিএসটিআই কী করছে

মাস্ক ও স্যানিটাইজারের মান

কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, এ রোগের জীবাণু নভেল করোনাভাইরাস অতিমাত্রায় সংক্রামক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর সংক্রমণ এড়ানোর জন্য যেসব করণীয় নির্ধারণ করে দেয়, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া এবং মানুষে মানুষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। অর্থাৎ, বিভিন্ন উপায়ে ভাইরাসের সংস্পর্শ এড়ানো। কিন্তু বাংলাদেশে এ বিষয়গুলো বরাবরই কম গুরুত্ব পেয়েছে।

প্রথম দিকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে মানুষের আগ্রহ দেখা গেলেও মাস্ক ব্যবহারে অনভ্যস্ততাজনিত অনীহা বা অবহেলা ছিল। তবে ক্রমে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। কিন্তু সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে এমন গুণগত মানসম্পন্ন মাস্কের অভাব প্রকট। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্কের বদলে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ যেসব মাস্ক ব্যবহার করে আসছে, সেগুলোর গুণগত মান আসলে কেমন, তা কেউই নিশ্চিত বলতে পারে না।

কারণ, মাস্কের গুণগত মান খতিয়ে দেখা এবং উন্নত মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেউ পালন করেনি; স্যানিটাইজারের বেলায়ও তা-ই। অথচ এ দুটি সুরক্ষাসামগ্রী এখন বাংলাদেশে নিত্যব্যবহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে এগিয়ে এসেছে অজস্র প্রতিষ্ঠান। আসলে তারা কী মানের মাস্ক ও স্যানিটাইজার দিয়ে বাজার ভরিয়ে ফেলেছে, তা দেখার দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই)। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির সাত মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও তারা মাস্ক ও স্যানিটাইজারের মান পরীক্ষার কাজ শুরু করেনি। প্রতিষ্ঠানটির একজন উপপরিচালক নিজেই এ কথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

বিএসটিআইয়ের তরফে এটি একটি গুরুতর ঘাটতি বলে আমরা মনে করি। কারণ, এ মহামারিকালে মাস্ক ও স্যানিটাইজার এমন গুরুত্বপূর্ণ দুটি পণ্য, যেগুলোর গুণগত মানের ওপর সংক্রমণ রোধের কার্যকারিতা নির্ভর করছে। সরকার জনগণকে মাস্ক পরতে এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলছে, কিন্তু বাজার যদি গুণগত মানহীন মাস্ক ও স্যানিটাইজারে সয়লাব হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো ব্যবহার করে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়, বরং তা ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত ছিল বাজারের সব ধরনের মাস্ক ও স্যানিটাইজারের নমুনা পরীক্ষা করে গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য বিএসটিআইকে তাগিদ দেওয়া।

বিএসটিআই যদিও বলছে, লোকবলের স্বল্পতার কারণে তারা অনেক পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করতে পারে না, তবু মহামারির ঝুঁকি বিবেচনায় এ দুটি পণ্যের মান পরীক্ষা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। আর দেরি না করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন সব ধরনের মাস্ক ও স্যানিটাইজারের নমুনা পরীক্ষা করে যেগুলো মানহীন বা নিম্নমানের, সেগুলোর বিক্রি নিষিদ্ধ করা হোক।