পর্যটন শহরে এ কেমন প্রতিবাদ

মামলায় অচল কক্সবাজার

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

একটি হত্যাচেষ্টা মামলার জের ধরে গত রোববার ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা পর্যটন শহর কক্সবাজারে যে নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এর মাধ্যমে তাঁরা কেবল চার ঘণ্টা কক্সবাজার শহরটিই অচল করে রাখেননি, হাজার হাজার পর্যটককে মহাভোগান্তিতে ঠেলে দিয়েছেন।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি করার খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় মেয়রের কয়েক হাজার অনুসারী, দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থক রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁরা শহরের প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সড়কের দুই পাশের কয়েক হাজার দোকান বন্ধ হয়ে যায়। অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। যদিও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকের পর রাত সাড়ে নয়টায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু কক্সবাজার পৌরসভার কর্মচারীরা গতকাল বেলা দুইটা পর্যন্ত সব ধরনের সেবা দেওয়া বন্ধ রাখেন।

এ আকস্মিক অবরোধের কারণে সন্ধ্যার পর সমুদ্রসৈকত ও হোটেল-মোটেল জোনে কয়েক শ দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৈকতে ভ্রমণে আসা ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক বিপাকে পড়েন। সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিকেড দেওয়ায় এবং পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় দূরপাল্লার শতাধিক বাস আটকা পড়ে।

গত ২৭ অক্টোবর রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করার ঘটনায় রোববার বিকেলে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়। মামলাটি করেন মোনাফ সিকদারের বড় ভাই মো. শাহজাহান। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয় পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে। মেয়রের অনুসারীরা মনে করেন, আওয়ামী লীগে মেয়রের প্রতিপক্ষ গ্রুপ এই মামলা করিয়েছে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য।

কথা হলো কারও নামে কোনো মামলা হলেই কি শহর অচল করে দিতে হবে? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এর সত্যাসত্য প্রমাণের উপযুক্ত স্থান হলো আদালত। তারপরও কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে সেটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করতে হবে, জনজীবন ব্যাহত হয় এমন কিছু করা যাবে না। মামলার প্রতিবাদের নামে যাঁরা শহর অচল করেছেন, তাঁরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন; জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করেছেন। অন্যদিকে কক্সবাজার পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও এক কাঠি সরেস। তাঁরা রোববার রাত থেকে সোমবার বেলা দুইটা পর্যন্ত ধর্মঘট পালন করে সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ রাস্তায় মাস্তানি করা নয়।

কেবল কক্সবাজার নয়, সারা দেশেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির কারণে। এ অবস্থা চলতে পারে না। যাঁরা প্রতিবাদের নামে কক্সবাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন, তাঁদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক। একই সঙ্গে পর্যটনের শহরে যাতে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকে, সে বিষয়েও স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অধিকতর সজাগ থাকতে হবে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কারও প্রতি অতিশয় নমনীয় এবং কারও প্রতি অতি কঠোর অবস্থান কাম্য নয়।