স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষাসামগ্রী দিন

মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা

কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার সম্পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ হয়েছে মহামারি মোকাবিলার প্রতি। ফলে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা ভীষণভাবে অবহেলিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে রোগের চিকিৎসা ছাড়াও নিয়মিতভাবে কিছু কাজ সারা বছর চলে। যেমন বিভিন্ন সংক্রামক রোগের টিকাদান কর্মসূচি, প্রসূতিদের প্রসবপূর্ব ও প্রসবকালীন সেবাদান, গ্রামাঞ্চলে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষাদান, এলাকার রোগব্যাধির হালনাগাদ পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত অবহিত করা, ইত্যাদি। এ কাজগুলো সারা বছর নিয়মিতভাবে করার জন্য রয়েছেন ২৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার। দেশে মহামারি আকারে একটি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে বলে এসব প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হবে, এমনকি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে—এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কিন্তু কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকেই সারা দেশের মাঠপর্যায়ের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কাজ ব্যাহত হয়ে চলেছে। প্রথম দিকে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় স্বাস্থ্যকর্মী ও হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা গ্রামাঞ্চলে তাঁদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারেননি। দেশের অনেক এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি ভীষণভাবে ব্যাহত হয়েছে, প্রসবকালীন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেক প্রসূতি। সবচেয়ে বড় সমস্যা স্বাস্থ্যকর্মী ও হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টি। মাঠপর্যায়ে পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভসের সরবরাহে শুরু থেকেই ঘাটতি ছিল। সর্বশেষ খবর হলো এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও টিকা কর্মসূচির কর্মীদের মাস্ক ও গ্লাভস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কতটা ব্যাহত হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়।

মহামারির একদম শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের সংক্রমণ এড়ানোর জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। কারণ, তাঁদের সুরক্ষার ওপরে মহামারি মোকাবিলার পাশাপাশি সাধারণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার সচল থাকা অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই তাঁদের জন্য গুণগত মানসম্পন্ন ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই), মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব কেনাকাটা ও সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে ও পরে প্রতিদিনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পিপিইসহ বিভিন্ন সামগ্রীর হিসাব সংবাদমাধ্যমকে জানাত। তাতে নতুন সংগ্রহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ ও মজুতের হিসাব থাকত। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুই সপ্তাহ ধরে সেই হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করছে না। ফলে এ বিষয়ে প্রকৃত চিত্রটি জানা যাচ্ছে না।

এ পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে এসব তথ্য প্রকাশের ব্যবস্থা করা হোক। মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হোক।