প্রকল্পটির পুনর্মূল্যায়ন হোক

মাগুরায় নবগঙ্গা পুনঃখনন

নবগঙ্গার পুনঃখনন পরিকল্পনার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রায় আড়াই শ কিলোমিটারের নবগঙ্গা নদীটি মাগুরার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ৫০ কিলোমিটার। নদীটির প্রস্থ ৩০০ মিটার অনুমান করা হয়। এই নদী এর আগে মাগুরার অংশে কখনো পুনঃখনন করা হয়েছে বলে জানা যায় না। প্রশ্ন হলো কী ধরনের সমীক্ষার ভিত্তিতে ৫০ কিলোমিটারের মধ্য থেকে ১১ কিলোমিটার এবং ৩০০ মিটার প্রস্থ বিবেচনা না করে মাত্র ৮০ মিটার ধরে নদীটির মাগুরার অংশ পুনঃখননকাজ হাতে নেওয়া হলো?

প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ এই নদীর পুনঃখনন কাজটি যথাসময়ে শেষ হবে, সেটা মাগুরাবাসী নিশ্চয় আশা করবেন। কিন্তু পুনঃখনন প্রকল্পটি ঠিক কী ধারণার দ্বারা তাড়িত হয়ে নেওয়া হয়েছিল, তা যাচাই করে দেখার প্রশ্ন নাকচ করা যাবে না। কারণ, নদীর নাব্যতা বাড়াতে হলে নদীর স্থায়ী পাড় রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আলোচ্য প্রকল্পে সেই ধরনের কোনো চিন্তাভাবনার ছাপ নজরে পড়ে না। বরং সচেতন মহলে এই প্রশ্ন উঠছে যে, শুকনো মৌসুমে নদীকে জলাধার হিসেবে ব্যবহার করা মূল লক্ষ্য হলে জনগণকে এটা বলতে হবে যে সরকারি নথিপত্রে নবগঙ্গা নদীটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত।

শুকনো মৌসুমে নদীর প্রস্থ মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিটারে এসে দাঁড়ায়। এ কারণে দুই পাড়ে বোধগম্য কারণেই চাষাবাদ গড়ে উঠেছে। এখন ৮০ মিটার প্রস্থ ধরে মাটি কেটে ঠিকাদারেরা হয়তো তাঁদের সৃষ্ট ‘নতুন পাড়ে’ রাখছেন। ফলে প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, এই পুনঃখনন প্রকল্প নদীর আয়তন স্থায়ীভাবে ছোট করে দিচ্ছে কি না? বর্ষায় যেখানে নদী স্ফীত হয়ে ৩০০ মিটারে প্রসারিত হয়, সেখানে এই ৮০ মিটারের ‘নতুন পাড়’ কীভাবে টিকবে? উপরন্তু দরপত্রের শর্তে যা আরোপ করা হয়েছিল, বাস্তবে তার ব্যত্যয় ঘটছে। কারণ, দরপত্রের শর্ত ছিল খনন করা মাটি ফেলতে হবে খননস্থলের ৩০ থেকে ১০০ মিটার দূরে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে মাটি ফেলা হয়েছে নদীর মধ্যেই।

এখন প্রথমত কাজের নজরদারি এবং দরপত্রের শর্ত কঠোরভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। খননকাজে লং বুম্ব এক্সকাভেটার ব্যবহারের শর্ত ছিল, কিন্তু সেটা তারা পূরণ করেনি। কম ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার ব্যবহার ইঙ্গিত দেয় যে ঠিকাদারেরা স্বল্পব্যয়ে দায়সারা কাজ করে থাকতে পারেন। গ্রামবাসীদের এই আশঙ্কাও অমূলক নয় যে ঠিকাদারেরা যেন বর্ষার অপেক্ষা করছেন, তখন তঁারা সহজেই বিল তুলে নিতে পারবেন। যতখানি কাজ শেষ হবে, ততটার বিল দেওয়া হবে—এই আশ্বাসের মাধ্যমে জনগণের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এই খনন কী ফল দেবে বা আদৌ দেবে কি না, সেই প্রশ্নের কোনো সুরাহা হবে না।

খামখেয়ালিপনার এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই প্রকল্প। যাদের কারণে এমনটি হচ্ছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। এই সঙ্গে নবগঙ্গা নদীর পুনঃখনন প্রকল্পটিকে পুনর্মূল্যায়ন করে কার্যকর প্রকল্প নিতে হবে।