হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি জরুরি

মশার চারণভূমি

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান নগরগুলোর এক ডজনের বেশি নামকরা হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের খবর আমাদের বিস্মিত করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই হাসপাতালগুলো হয়তো সাধারণভাবে মশার চারণভূমি হিসেবেই বছরের পর বছর পার করে। কিন্তু দেশ যে ডেঙ্গুবিরোধী একটা অঘোষিত জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা কারও অজানা থাকার কথা নয়। বিশেষ করে, দেশে যেখানে যত হাসপাতাল আছে, সেগুলো এখন পর্যন্ত মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবেই চিহ্নিত হবে, সেটা মার্জনা করা চলে না। 

রাজধানীর উপকণ্ঠে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য বিস্ময়কর। কারণ, খোদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের নামে টানানো ব্যানারে ‘অপ্রয়োজনীয় পরিষ্কার পানি ফেলে দেওয়ার’ সতর্কবাণী থাকলেও হাসপাতালটির নিজের চত্বরটি ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিসের প্রজনন কেন্দ্র তৈরি হয়ে আছে। সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জরিপে এই হাসপাতালটির ভেতরে ও বাইরে ৮০ শতাংশ পাত্রে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে। মাত্র ২০ শতাংশ পাত্রে লার্ভা মিললে সেটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা সরেজমিন বিভাগীয় শহরগুলোর সদরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে গিয়ে দেখেছেন, প্রায় প্রতিটির পরিবেশ নোংরা, হাসপাতাল চত্বর ও ভেতরে যত্রতত্র পানি জমে আছে। যেখানে–সেখানে আবর্জনার স্তূপ। গবেষক বা অনুসন্ধানী হওয়ার কোনো দরকার পড়ে না। খালি চোখে যে কারও কাছেই সন্দেহাতীতভাবে ধরা পড়বে যে হাসপাতালগুলোর এমন পরিবেশই সাধারণ চিত্র। 

এটা বিচ্ছিন্ন কোনো দৃশ্যপট নয়। বাংলাদেশের জনগণ সরকারি খাতের হাসপাতালগুলো থেকে বরাবরই যে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে আসছে, তা–ও অপ্রতুল। আমরা এটা ভবিতব্য মেনে নিয়েই দিনগুলো পার করে চলছিলাম। কিন্তু দেশ ডেঙ্গু মশার প্রকোপের কারণে একটা বড় সংকটে পড়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা একমত যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে চটজলদি আমাদের মুক্তি নেই। বরং সরকারি প্রশাসনের সব স্তর থেকেই এই বার্তা পরিষ্কার যে অন্তত সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ডেঙ্গুর ধকল, বিশেষ করে হাসপাতালগুলোকে পোহাতে হতে পারে। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা অর্ধ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি রেকর্ড। উপরন্তু প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে নতুন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে সরকারি হাসপাতালগুলো অন্তত স্থানীয় উদ্যোগ নিয়ে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাবে, সেটাই ছিল স্বাভাবিক। এ জন্য তো ওপরের কড়া নির্দেশের অপেক্ষায় থাকার কারও দরকার ছিল না। 

ঢাকার মেয়রসহ অনেকেই ঘরের ভেতরের মশা উৎপাদনের উৎসগুলো ধ্বংসে নাগরিক অসচেতনতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। রাজধানীসহ অনেক স্থানে মোবাইল কোর্ট অপরিচ্ছন্নতার জন্য জেল-জরিমানা করছেন। ড্রেনের নোংরা পানির জন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা গুনেছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। এক দেশে দুই রকম চিত্র। 

আমরা মনে করি, সরকারি হাসপাতালগুলোকে যারা এত কিছুর পরও ‘কানে তুলো গুঁজে’ মশার চারণভূমি বানিয়ে রেখেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।