টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আবার রাস্তায় নেমেছে তাদের বসতবাটি ও জীবন–জীবিকা রক্ষার জন্য। তারা শত শত বছর ধরে যে জমিতে বসবাস করে আসছে, সেই জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার ভয় নিয়ত তাদের তাড়া করে ফিরছে।
প্রথম আলোর টাঙ্গাইল প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বলা হয়, সেখানকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা সোমবার মধুপুর উপজেলা সদরের আনারস চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সংরক্ষিত বনভূমি দখলদারদের তালিকা তৈরি করে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে উচ্ছেদের নোটিশ দিতে বলায় মধুপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে যায়। তাঁরা বলেছেন, মধুপুর গড়াঞ্চলে বসবাসকারী ২৫ হাজার গারো ও কোচ/বর্মণ সম্প্রদায়ের মানুষ বংশানুক্রমিকভাবে এই বনাঞ্চলে বসবাস করছেন এবং উঁচু চালা জমিতে জুমচাষ ও নিচু বাইদ জমিতে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তাঁরা জমির খাজনা দিয়ে আসছিলেন। পরে সরকার খাজনা নেওয়া বন্ধ করে।
২০০২ সালে তৎকালীন সরকার মধুপুর বনাঞ্চলে ইকোপার্ক ঘোষণা করলে স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ প্রতিবাদ করেন। সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ২০১৬ সালে মধুপুর বনাঞ্চলের অরণখোলা মৌজায় ৯ হাজার ১৪৫ দশমিক শূন্য ৭ একর জমিকে চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয় এবং উক্ত মৌজাতেই ১৩টি গ্রামে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসতি রয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বন বিভাগ অরণখোলা মৌজার পেগামারী গ্রামের এক নারী বাসন্তী রেমার ৪০ শতক জমির কলাবাগান কেটে ফেলে। পরে প্রতিবাদের মুখে বন বিভাগ পিছু হটে। বাসন্তী রেমা তাঁর কলাবাগান ফিরে পান।
মনে রাখা প্রয়োজন, স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এসব বন ধ্বংস করে না। তারা বন আগলে রাখে। বন উজাড় করে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা। কোনো এলাকায় ইকোপার্ক কিংবা সংরক্ষিত বনাঞ্চল করলে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়েই তা করতে হয়। ঐতিহ্যগতভাবে তারা যে জমিতে আছে, সেই জমি তাদের স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দিলে বনও রক্ষা পাবে, মানুষও রক্ষা পাবে। সেখানকার বাসিন্দারা যে সামাজিক বনায়নের বদলে প্রাকৃতিক বনায়ন তথা গ্রাম বন পদ্ধতি চালুর দাবি জানিয়েছেন, তাকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।