দেশের কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতি নেই—এটি বেশ পুরোনো খবর। কিন্তু মতলব উত্তর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির যে চিত্র প্রথম আলোতে এসেছে, তাতে এটি ‘পদ খালি প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে অভিহিত করলেও অত্ত্যুক্তি হবে না। এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই, নার্স নেই। যন্ত্রপাতি থাকলেও তা চালানোর লোকবল নেই। ফলে চিকিৎসাপ্রার্থীরা বিমুখ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
প্রথম আলোর মতলব দক্ষিণ প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বলা হয়, ৩১ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং এর অধীন ১৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে পদের সংখ্যা ২৪০টি। এর মধ্যে ৭০টি পদ খালি আছে। চিকিৎসকের ২৪টি পদের মধ্যে খালি আছে ১৫টি, যাদের মধ্যে অস্ত্রোপচার বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, প্রসূতিরোগ বিশেষজ্ঞ, অবেদনবিদ ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) একটি করে পদ আছে। সাধারণ চিকিৎসা কর্মকর্তার ৫টি ও সহকারী সার্জনের ৬টি পদও খালি আছে। এসব পদ সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত খালি আছে। জ্যেষ্ঠ নার্সের ২৪টি পদের মধ্যে ছয়টি পদও খালি আছে তিন বছর ধরে।
তবে এর চেয়েও উদ্বেগজনক হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোর উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের (সাকমো) ৮টি পদের সব কটি তিন বছর ধরে খালি থাকা। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দাবি করেন যে তাঁরা স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অর্থ কি বছরের পর বছর চিকিৎসার জন্য অতি আবশ্যকীয় চিকিৎসকের পদ খালি রাখা? সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি চালানোর মতো দক্ষ লোক না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। এদের কেউ কেউ দূরের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারলেও সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না।
একটি উপজেলা হাসপাতাল ঠিকমতো চলছে কি না, সেটি দেখার দায়িত্ব প্রথমত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার। তার ওপর সিভিল সার্জন আছেন। আবার সিভিল সার্জনের ওপরে আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শূন্য পদে লোক নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বরাদ্দের জন্য সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। কিন্তু সিভিল সার্জন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বড় কর্তারা সাড়া দেননি। তাই মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে সরকারের মতলবটি জানার বড় ইচ্ছে। তাঁরা যদি সত্যি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চান, তাহলে অবিলম্বে শূন্য পদগুলো পূরণ করুন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করুন।