সিলেটের উদ্যোগ সারা দেশে ছড়াক

ভ্যাট নিবন্ধনে 'হেল্প ডেস্ক'

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর হিসাবরক্ষক লিও ম্যাটার্সডর্ফকে একবার বলেছিলেন, তাঁর কাছে করের মতো দুর্বোধ্য বিষয় আর নেই। আইনস্টাইন 

মারা যাওয়ার আট বছর পর ১৯৬৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনকে এই কথা জানিয়েছিলেন ম্যাটার্সডর্ফ। 

আইনস্টাইনের মতো মহাবিজ্ঞানীর কাছে যে জিনিস সবচেয়ে দুর্বোধ্য, সেটি আমাদের দেশের সাধারণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে সহজবোধ্য মনে হওয়ার কারণ নেই। নানা কারণে তাঁদের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স, সংক্ষেপে ‘ভ্যাট’) সম্পর্কে ভীতি রয়েছে। ভ্যাট কী এবং কীভাবে পরিশোধ করতে হয়, তা অনেক ব্যবসায়ী জানেন না। কর অফিসে গিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় কি না, সেই আশঙ্কায়ও অনেকে ভ্যাট দেওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহী থাকেন। বহু ব্যবসায়ীর এই অহেতুক ‘ভ্যাটভীতি’র কারণে সরকার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন বিষয়কে মাথায় নিয়ে সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কার্যালয়কে দৃষ্টান্তযোগ্য একটি উদ্যোগ নিতে দেখা গেল। কার্যালয়টির পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ অনলাইন নিবন্ধন ‘হেল্প ডেস্ক’ উদ্বোধন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তারা ব্যবসায়ীদের ভ্যাট পরিশোধের জন্য ভ্রাম্যমাণ নিবন্ধন করতে দুটি গাড়ির উদ্বোধন করেছে। এই কার্যক্রমের আওতায় ব্যবসায়ীরা নিজ প্রতিষ্ঠানে বসেই মোবাইল হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট দিতে পারবেন। 

এই ব্যবস্থায় দুটি গাড়ির মাধ্যমে বাজারের বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করা হবে। গাড়ির কাছে এলেই ব্যবসায়ীরা অনলাইন নিবন্ধন করতে পারবেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা নিজ প্রতিষ্ঠানে বসেই মোবাইল হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট দিতে পারবেন। কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ভোগান্তি কমিয়ে সবাইকে ভ্যাট কার্যক্রমে আগ্রহী করে তোলাই এর উদ্দেশ্য। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই সম্পৃক্ত হতে পারবেন, এতে তাঁদের মন থেকে ভ্যাটভীতি দূর হবে। 

ভ্রাম্যমাণ অনলাইন রেজিস্ট্রেশন হেল্প ডেস্ক সিলেট নগরসহ বিভাগের হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় প্রদক্ষিণ করে ব্যবসায়ীদের অনলাইনে নিবন্ধনের কাজ করবে। ভ্রাম্যমাণ অনলাইন রেজিস্ট্রেশন হেল্প ডেস্ক গাড়ি ছাড়াও কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের উদ্যোগে বিভাগে আরও পাঁচটি স্থায়ী হেল্প ডেস্ক রয়েছে। 

সিলেটের এই ভ্যাট কার্যক্রমের আদলটিকে মডেল হিসেবে নিয়ে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে জনগণের ভ্যাট দেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ হবে। একই সঙ্গে ভ্যাট বাবদ সরকারের রাজস্ব সংগ্রহও বাড়বে। তবে রাজস্ব আদায়ের নামে ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে সতর্ক নজর রাখতেই হবে। অন্যথায় সব পরিশ্রম পণ্ডশ্রমে রূপ নেওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।