বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে

ভারতে বাড়ছে করোনা

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে সর্বোচ্চ সংক্রমণের কারণে প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর রেকর্ড হয়। সেখানে বর্তমানে দিনে করোনায় মৃত্যু শূন্যেও নেমে এসেছিল। গতকাল অবশ্য ছয়জন মারা গেছেন। বিধিনিষেধ উঠে গিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে আরও আগে। কিন্তু করোনার নতুন কোনো ঢেউ নিয়ে আমরা কতটুকু প্রস্তুত? এর আগে ভারতের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখতে দেখতে যথেষ্ট সময় পেয়েও প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে আমাদের ভুগতে হয়েছে করোনার ডেলটা ধরনে।

এখন ভারতে আবারও করোনা সংক্রমণ ও এতে মৃত্যুসংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বের অনেক জায়গায়ও নতুন করে সংক্রমণ দেখা গেছে। পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, ভারত থেকে যেন সংক্রমণ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় এ বিষয়ে সাতটি সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারসহ এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে—বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি কার্যক্রম জোরদার করা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে বড় পরিসরে করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব স্থাপন, সুষ্ঠুভাবে টিকাদান কার্যক্রম ও করোনা মোকাবিলায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া।

ভারতের সব মিশন থেকে সংগৃহীত হালনাগাদ তথ্য থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকে জানায়, ভারতের কেরালায় সংক্রমণের হার বেশি দেখা গেছে। সার্বিক প্রস্তুতি হিসেবে সীমান্ত এলাকায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা ও কোয়ারেন্টিন সুবিধা বাড়ানো এবং ট্রাকচালকদের টিকা দেওয়ার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় এমন অনেক সিদ্ধান্তই আমরা নিতে দেখেছি, যা শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা যায়নি এবং বিপর্যয়ও ঠেকানো যায়নি। করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ রোধে সীমান্ত নিরাপত্তা কোনোভাবেই নিশ্চিত করা যায়নি। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন যথাযথ ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা না নিয়ে পরিবারের দায়িত্বে করোনা আক্রান্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন ফিল্ড হসপিটাল করার কথা বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে এলেও সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেটি আমলে নেয়নি। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং তো শুরু থেকেই ঠিকঠাক হয়নি। ফলে সীমান্তসংলগ্ন এলাকাগুলো থেকে গোটা দেশে ডেলটা ছড়িয়ে পড়তে দেরি করেনি।

প্রথম ঢেউয়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি জেলায় আইসিইউ ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা আজও সম্ভব হয়নি। এখন দেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো, এমন অবস্থায় ভারতের সংক্রমণ বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিয়ে শুধু কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ নয়, তা যেন বাস্তবায়ন করা যায় সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। টিকাদান কর্মসূচিতেও দক্ষিণ এশিয়ায় সবার চেয়ে পিছিয়ে আছি আমরা। মহামারির দুটি ঢেউ চলে গেলেও আমরা জনসংখ্যার মাত্র এক-চতুর্থাংশের মতো মানুষকে টিকা দিতে পেরেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, আগে বয়স্ক লোকদের টিকা নিশ্চিত করতে বলা হলেও সেটি মানা হয়নি। সব বয়সীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে নাগরিকদের নির্দিষ্ট কোনো অংশের সুরক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। সেটি করা গেলে করোনার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী বয়স্কদের মৃত্যু হয়তো অনেকাংশে ঠেকানো যেত।

আমরা মনে করি, অতীতে যেসব ভুল আমরা করেছি, তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আগের কোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি হোক, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।