সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কটির বাড়তি গুরুত্ব আছে। এই সড়ক দিয়েই দেশি–বিদেশি পর্যটকেরা সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র, বিশেষ করে জাফলং, জৈন্তাপুর, লালাখাল, শ্রীপুর, শাপলাবিল, তামাবিলে যাতায়াত করেন। শিলং বা গুয়াহাটি থেকে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় নাগরিকেরাও এই সড়কটি ব্যবহার করেন। এ ছাড়া সিলেটের শাহপরান মাজারে আসা মানুষেরও একমাত্র পথ এটি।
এ রকম একটি ব্যস্ত সড়কের দুই পাশ পরিচ্ছন্ন ও সবুজে সাজানো থাকার কথা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর সিলেট সংস্করণে সড়কটির যে সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে, তাতে দেখা যায় শুধু পাশে নয়, সড়কের ওপরও আবর্জনার স্তূপ পড়ে আছে। এসব আবর্জনা আকাশ থেকে পড়েনি, মাটি থেকেও গজায়নি। এলাকার মানুষজনই আবর্জনা ফেলে ভাগাড় তৈরি করেছেন। যারা এসব আবর্জনা ফেলছেন, তাঁদের আগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সেটি হোক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান। পত্রিকার খবর অনুযায়ী এই সড়কের পাশেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। আছে হাসপাতালও। সে ক্ষেত্রে রোগী ও শিক্ষার্থীদের অবস্থা অনুমান করা কঠিন নয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, এলাকাটি সিলেট শহরের নিকটবর্তী হলেও সিটি করপোরেশনরের বাইরে খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে পড়েছে। তাই সিটি করপোরেশন এসব আবর্জনা অপসারণ করে না।
সিটি করপোরেশনের ভেতরে কিংবা বাইরে হোক, কোনো সড়কের দুই পাশে আবর্জনার স্তূপ জমে থাকতে পারে না। এসব আবর্জনার স্তূপ অপসারণের বিষয়ে গত জুলাই মাসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনের সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু তারা নিশ্চুপ থেকেছে। এটি দায়িত্বহীনতা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সড়কে স্থায়ীভাবে ডাস্টবিন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থায় হলেও সড়কটি ভাগাড়মুক্ত করতে হবে। এলাকাবাসী পরিবেশসচেতন হলে এ রকম আবর্জনার স্তূপ কেউ জমাতে পারতেন না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা আবর্জনা অপসারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পদক্ষেপ নিতে দেখেননি। কিন্তু এলাকার বাসিন্দা হিসেবে তাঁদেরও দায়িত্ব আছে। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে যাঁরা সড়ককে ভাগাড়ে পরিণত করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। এভাবে আঞ্চলিক মহাসড়কে আবর্জনার সড়কে পরিণত হতে দেওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার প্রশাসনিক প্রধান। এলাকার কোনো সড়কে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হওয়ার আগেই তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এলাকাবাসীকে সজাগ করতে পারতেন। একে অপরের ওপর দায় চাপানোর এই সংস্কৃতি বন্ধ হোক।