বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১ হাজার ৬০ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৬৫০ জনকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। কিন্তু কবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ক্লাস শুরু হবে, তা অনিশ্চিত। বুয়েটে প্রশাসনিক কার্যক্রম চললেও শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে খুন হন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আছেন। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কয়েক দিন কর্মসূচি শিথিল থাকলেও শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ফাহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত তাঁরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন না। কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে উপাচার্য সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধসহ তাঁদের বেশ কিছু দাবি মেনে নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ১৬ অক্টোবর গণশপথের মধ্য দিয়ে মাঠের আন্দোলনে ইতি টানলেও শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত আছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এই সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দাখিল করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনও পাওয়া যাবে। অন্যদিকে শিক্ষক সমিতিও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করলেও প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছিল। তবে উপাচার্য বলেছেন, তাঁর কোনো ব্যর্থতা নেই। আবরার হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তব্য পালনে কোনো গড়িমসি করেনি।
১৯ অক্টোবর বুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও আবরার হত্যার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সেটি নেওয়া সম্ভব হয়নি। বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক বলেছেন, একাডেমিক কাউন্সিল পরীক্ষার নতুন তারিখ দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো একাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হলে সংকট উত্তরণের সম্ভাবনা ক্ষীণ। ইতিমধ্যে অচলাবস্থার তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। এই সময়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এখন সরকারের দায়িত্ব হবে অবিলম্বে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দায়ের করা। আবরার হত্যার সন্দেহভাজন সব আসামিই গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং অনেকে আদালতে ১৬৫ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত, কার কী ভূমিকা ছিল সিসিটিভিতেও তার প্রমাণ রয়েছে। এ অবস্থায় অভিযোগপত্র জমা দিতে অহেতুক বিলম্ব করার কোনো কারণ নেই। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছাড়াও শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে। তারা এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলেও যোগাযোগের চেষ্টা করছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক হলে যে দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব, ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলা তার প্রমাণ। যে শিক্ষার্থীরা সতীর্থ হত্যার বিচারের দাবিতে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে এসেছেন, সেই শিক্ষার্থীদের আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নিতে হলে তাঁদের মনে এই বিশ্বাস জাগাতে হবে যে আবরার হত্যার ন্যায়বিচার হবে এবং ভবিষ্যতে সেখানে আর কোনো শিক্ষার্থীকে হত্যা বা নিগ্রহের শিকার হতে হবে না।
দেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েটে এ রকম অচলাবস্থা চলতে পারে না। আমাদের প্রত্যাশা, যে সদিচ্ছা নিয়ে সরকার আরবার হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে, বুয়েটের অচলাবস্থা নিরসনেও তারা একই রকম সদিচ্ছা দেখাবে। অবিলম্বে বুয়েটের অচলাবস্থার অবসান হোক এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসুক, এটাই প্রত্যাশিত।