অপ্রচলিত খেলাগুলো জনপ্রিয় হোক

বিশ্ব আর্চারিতে ব্রোঞ্জ জয়

কিছু খেলা আছে, যা একেবারেই ব্যক্তিনির্ভর। অর্থাৎ সেসব খেলা ফুটবল, ক্রিকেট বা ভলিবলের মতো দলভিত্তিক নয়। এসব খেলা একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিক নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করে। অলিম্পিক গেমসের মতো আন্তর্জাতিক আসরে সেই একেকজন খেলোয়াড়ই একেকটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁদের একক কৃতিত্ব ও সাফল্যের ওপরই তাঁদের দেশের সুনাম অর্জনের বিষয়টি নির্ভর করে। সাঁতার, বক্সিং, দৌড়—এসব একক ব্যক্তিনির্ভর খেলা বাংলাদেশে মোটামুটি প্রচলিত থাকলেও আর্চারি (তিরন্দাজি), ফেঞ্চিং (তলোয়ার হাতে মল্লযুদ্ধ), ডাইভিং, স্পিড স্কেটিং, স্কি জাম্পিং—এ রকম অনেক খেলার সঙ্গে সাধারণ বাংলাদেশিরা পরিচিত নয়। অথচ এসব খেলা অলিম্পিকের আসর মাতায়। নানান কারণে আমাদের দেশে এসব খেলা এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এসব খেলায় আমাদের অংশগ্রহণ প্রায় শূন্যের কোঠায়।

আর্চারি বা তিরন্দাজি খেলা আমাদের দেশে একেবারেই অপ্রচলিত। তবে একেবারে ব্যক্তি উদ্যোগে শুরু করার পর জাতীয় পৃষ্ঠপোষকতার মধ্যে খেলাটি ইতিমধ্যে বেশ এগিয়েছে। সেই উদাহরণ তৈরি করেছেন বাংলাদেশের তিরন্দাজ রোমান সানা। বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম কোনো পদক এনে দিয়েছেন তিনি। ১৬ জুন বিশ্ব আর্চারিতে তাঁর হাত দিয়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছে বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত হুন্দাই বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে ইতালির মাওরো নেসপলিকে ৭-১ পয়েন্টে হারিয়ে তিনি এ কৃতিত্ব অর্জন করেন। এর আগে ১৩ জুন নেদারল্যান্ডসের ফন ডেন বার্গকে ৬-২ সেটের ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠেন রোমান। আর তখনই আসন্ন টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন রোমান।

তার মানে আগামী অলিম্পিকে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি আর্চারিতে থাকছেন, এটি খুবই আনন্দের কথা। এর আগে ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে গলফ খেলায় গলফার সিদ্দিকুর প্রথমবার সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন।

ফেঞ্চিং, ডাইভিং, স্পিড স্কেটিং, স্কি জাম্পিং—এসব খেলাকে যদি এ দেশের তরুণদের কাছে পরিচিত করে তোলা যায়, তাহলে এসব ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সাফল্য পাওয়া সম্ভব। এর জন্য খুব বেশি তহবিল বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তাও নেই। আন্তরিক ইচ্ছাই সবচেয়ে জরুরি। বাংলাদেশে কয়েক কোটি প্রাণোচ্ছল তরুণ-তরুণী আছেন, যাঁদের একটি বিরাট অংশের মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চালু অথচ বাংলাদেশে অপ্রচলিত, এমন সব খেলাধুলায় আগ্রহ আছে। তাঁরা অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে জিমন্যাস্টিকস ও ফেঞ্চিংয়ের মতো খেলার চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার যদি এ বিষয়ের দিকে নজর দেয় এবং দেশজোড়া অনুসন্ধান কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে মেধাবী খেলোয়াড়দের তুলে এনে তাঁদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেয়, তাহলে অলিম্পিক গেমসের মতো আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব অনেক বাড়তে পারে।