পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবক্ষয় ঠেকাতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাতাহাতি

বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন প্রবীণ শিক্ষক বৃহস্পতিবারের ঘটনাটিকে ‘নোংরামির চূড়ান্ত রূপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর এই বর্ণনা যে যথার্থ, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সচেতন নাগরিক মহলে এবং ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র নিন্দা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে। অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক যথার্থই বলেছেন যে এই ঘটনা আকস্মিকভাবে ঘটেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি ও স্বার্থের সংঘাত এমন কদর্য রূপ ধারণ করেছে যে তার সহিংস প্রকাশ এখন আর অসম্ভব নয়। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় কতিপয় শিক্ষক পরস্পর কিল-ঘুষি মারার মধ্য দিয়ে সেটাই প্রমাণ করেছেন। এর আগে কতিপয় শিক্ষককে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের কিল-ঘুষি মারা ও কলার চেপে ধরার মতো অশিক্ষকসুলভ আচরণ করতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতি-সচেতনতা, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং উচ্চমানের শিক্ষা-গবেষণা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ঐতিহ্য ছিল। এ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক দিকনির্দেশনার অন্যতম কেন্দ্র, সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এখন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি, এমনকি একই দলের ভেতরে উপদলীয় কোন্দল ন্যক্কারজনক মাত্রা অর্জন করেছে।

শিক্ষা-গবেষণা, পঠনপাঠন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে বিদ্যাপীঠ হিসেবে আরও উৎকর্ষ সাধনের পথ ছেড়ে ব্যক্তিগত বৈষয়িক স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে সংকীর্ণ ও অসংস্কৃত দলাদলিতে লিপ্ত হয়ে যে শিক্ষকেরা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষকসমাজের যে অংশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধ্বংসপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন কিন্তু এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে আগ্রহ বোধ করে না, এখন তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় হওয়ার সময় এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য জাতীয় রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির বাইরে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে সচেতন ছাত্রসমাজকে, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন বিদ্যার্জনের মাধ্যমে উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত অবক্ষয় রোধ করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ সক্রিয়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।