বিচার হোক অপহরণকারীদের

বিপন্ন লাকিংমের পরিবার

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জীবিত থাকতে চাকমা কিশোরী লাকিংমের খোঁজ নেননি কেউ। সে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হলো মৃত্যুর পর। তার বাবা লালা অং চাকমা বলেছেন, দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে হত্যা করেছে। মা কোচিং চাকমার আক্ষেপ, মরেও মেয়েটা শান্তি পেল না। অপহরণকারীরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আতাউল্লাহ নামের যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ, তিনি বলেছেন, লাকিংমে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে।

হত্যা কিংবা আত্মহত্যা যা-ই হোক না কেন, ১৫ বছর বয়সী লাকিংমেকে যে অপহরণ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। প্রথম আলোর কক্সবাজার প্রতিনিধির পাঠানো খবর থেকে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার চাকমাপল্লির বাসিন্দা লালা অং চাকমার পাঁচ সন্তানের মধ্যে লাকিংমে ছিল দ্বিতীয় মেয়ে। স্থানীয় বাহারছড়া শামলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত সে। ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন বাড়ি থেকে তাকে অপহরণ করেন। এরপর কুমিল্লায় নিয়ে লাকিংমেকে বিয়ে করেন আতাউল্লাহ। আতাউল্লাহর বাড়ি বাহারছড়া ইউনিয়নেরই মাথাভাঙ্গা গ্রামে। মৃত্যুর পর লাকিংমের মরদেহ দাবি করেছিল দুই পরিবারই। পরে আদালতের নির্দেশে তার মরদেহ মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর আতাউল্লাহর বাহারছড়ার বাড়িতে মারা যায় লাকিংমে। মারা যাওয়ার ১২ দিন আগে লাকিংমে একটি মেয়েসন্তানের জন্ম দেয়। আতাউল্লাহর এক বোন মেয়েটিকে লালনপালন করছেন। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ স্বেচ্ছায় কোনো উদ্যোগ নিলে কারও কিছু বলার থাকে না। কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি কিশোরী মেয়েকে অপহরণ ও বিয়ের বিষয়টি আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ। পুলিশ বলছে, লাকিংমের অপহরণকারীদের খুঁজে পাচ্ছে না তারা। অথচ লাকিংমের মা বলেছেন, অপহরণকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। লাকিংমের অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচার করার দায়িত্ব সরকারেরই।

সম্প্রতি কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি চাকমাপল্লিতে গিয়ে দেখতে পান, মেয়েকে হারিয়ে লাকিংমের মা-বাবা দিশেহারা। বর্তমানে লাকিংমের পরিবার জরাজীর্ণ টংঘরে খুবই অর্থকষ্টে আছে। মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা পরিবারটিকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেন। পরে তাঁরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে লাকিংমের পরিবারের জন্য একটি ঘর তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি ইতিবাচক সাড়া দেন।

আমাদের প্রত্যাশা, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই লাকিংমের পরিবারের বসবাসের জন্য যাতে একটি ঘর তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।