গ্রাহকদের ভোগান্তি দূর করুন

বিদ্যুতের ভুয়া বিল

পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১০ হাজার গ্রাহককে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, তা 

একেবারেই অনভিপ্রেত। এ ঘটনায় সরকারি কাজের গাফিলতির বিষয়টি আবারও সামনে এল।

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই ১০ হাজার গ্রাহক গত জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরও সেপ্টেম্বর মাসের বিলের সঙ্গে জুলাই মাসের বিলটি জরিমানাসহ যুক্ত করে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়। এই গ্রাহকদের কেউ কেউ আঞ্চলিক কার্যালয়ে এসে বিল সংশোধন করে নিয়েছেন। কিন্তু এ জন্য তাঁরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেক গ্রাহককে ১৫-২০ কিলোমিটার দূর থেকে উপজেলা সদরে আসতে হয়েছে। এতে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আবার বিলিং বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করতে গেলে তাঁরা অসদাচরণ করেছেন। অনেকে আবার না বুঝে চাপিয়ে দেওয়া অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করেছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে বিল প্রস্তুত করে তাঁদের কাছে পাঠিয়েছে।

ভুলটা পল্লী বিদ্যুতের, কিন্তু সেই ভুলের মাশুল গুনতে হলো ১০ হাজার গ্রাহককে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে আমাদের দেশে এ রকম ঘটনা নতুন কিছু নয়। ভুতুড়ে আর ভুয়া বিলে প্রায়ই ভোগান্তির মুখে পড়েন এ দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা। মিটার না দেখেই অফিসে বসে বিল তৈরি করেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এতে করে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয় গ্রাহকদের। অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ নিয়ে অনেকেই সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে ধরনা দিলেও সবাই প্রতিকার পান না।

আমাদের প্রশ্ন, কত দিন এভাবে চলবে? এর কি কোনো সমাধান নেই? ভুতুড়ে বিল রোধ, সিস্টেম লস কমানোসহ বিদ্যুৎ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রাহক পর্যায়ে প্রি-পেইড মিটার বসিয়েছে সরকার। কিন্তু সেখানেও রয়েছে নানা সমস্যা। সংযোগ পেতে বিলম্ব, মিটারে ত্রুটি দেখা দিলে সমাধানে সময়ক্ষেপণ, রিচার্জের জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াও মিটার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকেরা। পুরোনো মিটার পরিবর্তন করে নতুন মিটার স্থাপনে কোনো ধরনের অর্থ আদায়ের সুযোগ না থাকলেও অনেক স্থানেই অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই অতিরিক্ত ভ্যাট কর্তনের অভিযোগ করেছেন। সরকার প্রিপেইড মিটার চালু করেছে, কিন্তু প্রিপেইড কার্ডের রিচার্জ করার প্রক্রিয়াটি সহজ করেনি।

 মোবাইল ফোন রিচার্জের মতো বিদ্যুতের প্রিপেইড কার্ডের রিচার্জও সহজলভ্য করা উচিত। তা ছাড়া মোবাইলে অ্যাপসের মাধ্যমে বিল পরিশোধের ব্যবস্থাও থাকা দরকার। তাহলে গ্রাহকেরা যেকোনো সময় মোবাইলের মাধ্যমেই বিল পরিশোধ করতে পারবেন। সরকারকে এসব ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কঠোর হতেই হবে।