জায়গাটি বিদ্যালয়ের নয়, চা-বাগানের। মহানুভবতার বশে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুলের বাচ্চাদের খেলার জন্য লাগোয়া ৩৩ শতক জায়গা ব্যবহারের জন্য দেয়। তিন বছর ধরে এভাবেই চলে আসছিল। জায়গাটি দখলের সুযোগ আসে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে খেলার মাঠটিকে পুকুরে পরিণত করে মাছ চাষ শুরু করা হয়। কাজটি করেন আর কেউ নয়, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
কোন অন্যায়টি বড়? চা-বাগানের জমি দখল, নাকি বাচ্চাদের জন্য দেওয়া খেলার মাঠের জমিতে পুকুর কেটে মাছ চাষ করা? শুধু মাছ চাষই নয়, পুকুর করার পর বাকি জমিতে ধান চাষও শুরু হয়ে যায়। চা-বাগানের জায়গা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করার সুযোগ নেই, ব্যক্তিগত দখল তো দূরের কথা। যেখানে চা-বাগান কর্তৃপক্ষও চাইলে অন্য কিছু করতে পারে না, সেখানে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি কোন এখতিয়ারে সেই জমির চরিত্র পরিবর্তন করে সেখানে বাণিজ্যিক চাষাবাদ করেন, পুকুর কাটেন?
দুষ্কৃতকারীর নাকি ছলের অভাব হয় না। অভিযুক্ত ব্যক্তি অপকর্মের দায় স্বীকার এবং জমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মাছের খামারের জন্য বন্দোবস্ত জমি অন্য কাজে নেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করেছেন।
এ বিষয়ে প্রথম আলোর রোববারের খবরে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতির যে বক্তব্য এসেছে, তা আরও হাস্যকর। হাজি আবদুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমি নামের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি সালাহ উদ্দিন আহমদ দাবি করেছেন, পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কর্ম করা হয়েছে। কিন্তু ওই কমিটি কি আলোচিত জমিটির মালিক? তাঁরা অন্যের জমি জোরপূর্বক দখলই শুধু করেননি, বিদ্যালয়ের শিশুদের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। এ কেমন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও তার সভাপতি, যাঁরা নিজ বিদ্যালয়ের শিশুদের খেলার মাঠকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নষ্ট করেন? এ থেকে ধারণা করা যায়, শিশু-কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা কমিটির নামে আসলে স্থানীয় দুর্বৃত্তদেরই দখলে। এদের উদ্দেশ্য বিদ্যালয়ের বিকাশ নয়, শিক্ষার প্রযত্ন নয়; এদের উদ্দেশ্য কোনোভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের কোনো কমিটির পদ দখল করে তাকে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের জন্য ব্যবহার করা।
আমরা আশা করব, জমিটি আগের মতো বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হিসেবেই ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হোক। বিষয়টি যদিও আদালতে গড়িয়েছে, কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনেরও এ ব্যাপারে হাত গুটিয়ে বসে থাকার কিছু নেই।