বিদেশফেরত শ্রমিক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বিশ্বব্যাপী করোনার কারণে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকেরা নানামুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আমাদের যেসব শ্রমিক প্রবাসে ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগ সেখানকার অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা রকম কাজে যুক্ত আছেন। করোনার কারণে অনেক দেশে এসব কাজের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিককে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। তাঁদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ অবস্থায় কেবল দেশে ফেরত শ্রমিকেরা নন, তাঁদের পুরো পরিবারই ঝুঁকিতে আছে।

প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ যেমন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার স্ফীত করছে, তেমনি অর্থনীতিকেও করছে গতিশীল। বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর দেশে ফিরেছেন ৪ লাখ ৮ হাজার প্রবাসী শ্রমিক। বিদেশে শ্রমিকদের আসা-যাওয়া স্বাভাবিক রীতি হলেও গত বছর যে সংখ্যক শ্রমিক বিদেশে গেছেন, ফিরে এসেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। এটা উদ্বেগের অন্যতম কারণ।

প্রবাসী ও বিদেশফেরত শ্রমিকদের আরও অনেক সমস্যা আছে, যার প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। অনেকে এখানে এসে আটকা পড়েছেন, ফ্লাইট বন্ধের কারণে যেতে পারছেন না। প্রবাসীকল্যাণসচিব বলেছেন, দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডের দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা নিতে বিদেশফেরত শ্রমিকেরা বেশ আগ্রহ দেখান, কিন্তু প্রবাসী ঋণ নিতে তাঁদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। কেন আগ্রহ নেই, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।

সরকার দেশে ফেরত আসা প্রবাসী শ্রমিকদের পুনর্বাসনে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার যে বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে, তার ১ শতাংশের কম বিতরণ হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক। এ ঋণ নিয়েছেন মাত্র ৬১৬ জন, শতাংশের হিসাবে ঋণ বিতরণ হয়েছে শূন্য দশমিক ১৫ ভাগ। ঋণ বিতরণের এ বেহাল অবস্থার কারণ কী? প্রথমত, প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অংশ ঋণসুবিধা সম্পর্কে জানেন না। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ দেওয়া হলেও সারা দেশে এর শাখা মাত্র ৬৬টি। বিদেশফেরত শ্রমিকদের কাছে ঋণসুবিধা দিতে হলে অন্যান্য ব্যাংকের সহায়তা নিতে হবে। প্রয়োজনে সুদের হার আরও কমাতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছিল, অনেকের পক্ষে তা পূরণ করা সম্ভব ছিল না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঋণ নিতে পাসপোর্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু যেসব শ্রমিক পাসপোর্ট বিদেশে রেখে কেবল ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে দেশে এসেছেন, তাঁরা কীভাবে আবেদন করবেন? পরে ঋণের শর্ত কিছুটা শিথিল করা হলে ঋণ বিতরণের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে।

আরেকটি সমস্যা হলো প্রবাসী শ্রমিকেরা ঋণ নিয়ে কী করবেন? তাঁরা দীর্ঘদিন চাকরি করে এসেছেন; ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই ঋণ দেওয়ার আগে বিদেশফেরত শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ সমবায় পদ্ধতিতে সামাজিক ব্যবসায় ঋণ দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ না দিয়ে শ্রমিকদের ঋণ দিয়ে সরকার বা প্রবাসী মন্ত্রণালয় দায়িত্ব শেষ করলে বিদেশফেরত শ্রমিকেরা লাভবান হবেন না। নারী শ্রমিকদের আলাদা প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তাঁরা নিজেরাই ব্যবসা করতে পারেন।