বাংলাদেশের সড়ক পরিবহনব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের প্রাধান্য অনেকটাই জবরদস্তিমূলক রূপ ধারণ করেছে। তারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে যাত্রীসেবা দেয় না, তার চেয়ে অনেক বেশি দাম নেয়। সময়ে সময়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো বাসের টিকিটের দাম বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই সড়কপথে চলাচলকারী মানুষ পরিবহন খাতের মালিকদের অনিয়ন্ত্রিত মুনাফালিপ্সার কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
জনগণের এ অসহায় দশা কিছুটা লাঘব হতে পারত, যদি সরকারি খাতের সড়ক পরিবহনসেবা কার্যকর করা সম্ভব হতো। কিন্তু এখানেও বেসরকারি খাত বিরাট বাধার সৃষ্টি করে। তারা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস সড়ক–মহাসড়কে নামতেই দিতে চায় না। বিভিন্ন সময় দেশের অনেক রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু বেসরকারি খাতের পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের বাধার মুখে সেগুলো সচল থাকতে পারেনি। সর্বশেষ সিলেট থেকে খবর এল, সিলেট-শ্রীমঙ্গল ও সিলেট-হবিগঞ্জ
সড়কে বিআরটিসির ১২টি বাস চালু করার উদ্যোগটি শুরুতেই তাদের বাধার মুখে পড়েছে।
২৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সকালে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে শ্রীমঙ্গল রুটে বিআরটিসির বাস চালু করতে গেলে বেসরকারি খাতের প্রায় অর্ধশত পরিবহনশ্রমিক বিআরটিসির কাউন্টারে হামলা চালান। এমনকি তাঁরা সংস্থাটির কিছু কর্মীকে মারধর করেন এবং সিলেট বিআরটিসি ডিপোর ব্যবস্থাপকের জিপ ভাঙচুর করেন। বিআরটিসির আরেকটি বাস সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পথে মৌলভীবাজারের শেরপুরে পরিবহনশ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে।
সিলেট জেলা সড়ক মালিক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসব হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ নাকচ করেছেন। কিন্তু তাতে বাস্তবে যা ঘটেছে, তার কোনো হেরফের হবে না। প্রকৃতপক্ষে পরিবহনশ্রমিকদের ওই সব সহিংস আচরণ ফৌজদারি অপরাধের শামিল। বিআরটিসির বাস চলাচলের বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য হলো, ওই রুটে বেসরকারি খাতের পর্যাপ্ত বাস আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বেসরকারি খাতের পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের কাছে ওই এলাকার যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বিআরটিসি তাঁদের দুর্ভোগ কমানোর উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ে নির্দেশে দুই রুটে ১২টি বাস চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার বেসরকারি খাতের মালিক-শ্রমিকদের নেই।
বিআরটিসি জনগণের সংস্থা; তারা জনগণকে অবশ্যই যাত্রীসেবা দেবে। শুধু সিলেট অঞ্চলে নয়, সারা দেশের সব রুটেই বেসরকারি বাস সার্ভিসের পাশাপাশি বিআরটিসির বাস সার্ভিস স্থায়ীভাবে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দেশের সড়ক পরিবহনব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের একাধিপত্যের কারণে যাত্রীসাধারণের যে জিম্মি দশার সৃষ্টি হয়েছে, তার অবসান ঘটানো জরুরি।