নিষিদ্ধঘোষিত পলিথিন ব্যাগে বাজার সয়লাব থাকা কেবলই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যর্থতা নয়। এটি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটা রাজনৈতিক অঙ্গীকারগত শোচনীয় ব্যর্থতারও নজির। ২০০২ সালে যখন পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন ঢাকার রাজপথে বেবিট্যাক্সিও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। উধাও হতে দেখেছিলামও। বেবিট্যাক্সি পরে আর রাজধানীতে ফিরে আসেনি। তার কারণ বেবিট্যাক্সি তুলে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিকল্প নগরবাসী পেয়েছিল।
বিকল্প তৈরি না করে বেবিট্যাক্সি তুলে নেওয়া হলে সেটা এভাবে কার্যকর হতো কি না সন্দেহ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জেনেও মানুষ বেবিট্যাক্সি ব্যবহারে ঝুঁকে থাকত। পলিথিনের স্বাস্থ্যঝুঁকি শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ যাঁরা ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল, তাঁরাও কিন্তু বাজার থেকে সওদা কিনতে গিয়ে পলিথিন দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেন না। ভোক্তাদের ওই প্রবণতাকে শুধু আইন করে নিষিদ্ধ রাখলেই রোধ করা যাবে না। গত ১৭ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের এটা ভাবতে বাধ্য করছে। অবশ্য তার অর্থ এই নয় যে, কামরাঙ্গীরচরে পুলিশের নাকের ডগায় নিষিদ্ধঘোষিত পলিথিনের ব্যবসা ও সারা দেশে এর যে ব্যবহার চলছে, তা ঠেকাতে না পারার বিষয়টি যৌক্তিক।
এটা অনুমেয় যে, কামরাঙ্গীরচরে ৫০টি কারখানা চালু থাকা এবং চকবাজারে প্রায় ১০০ পাইকারি বিক্রেতার প্রকাশ্যে সক্রিয় থাকার ঘটনা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অজ্ঞাতসারে ঘটে না। উপরন্তু মোবাইল কোর্টকেও এই অবৈধ পলিথিন ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া আছে। কিন্তু এগুলো কাজ করে না। কোনো জুতসই বিকল্প না থাকলেও শুধু পুলিশি কড়াকড়ির কারণে ২০০৬-০৭ সাল পর্যন্ত পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার উঠেই গিয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জননী। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলে এত দিনে একটা সুবিধাজনক সমাধান সূত্র নিশ্চয়ই বের হতো এবং ভোক্তা সমাজও এত দিনে হয়তো সেই নতুন বিকল্প পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হতো। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সুরক্ষা আইনে পলিথিন উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারকারীদের ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং ন্যূনতম ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু এগুলো শুধুই কেতাবি কথা হয়ে আছে।
অথচ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকেরা জানেন, পলিথিন বন্ধের আইন কার্যকর করা এবং ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে বেশ আগেই একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সোনালি ব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে রীতিমতো ধরনা দিয়ে চলছেন। তিনি যে সফল হবেনই, সেটাও ইতিমধ্যে হাতে-কলমে পরিষ্কার। পরিবেশমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা স্বীকার করেছেন যে, ড. মোবারক আহমেদ খান উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আর সেটা শুধু বাংলাদেশের চাহিদা মেটানোর দিক থেকেই নয়, এই ব্যাগ বিশ্বের আরও বহু দেশের কাছে সমাদৃত হবে। নীতিনির্ধারকদের এটাও অজানা নয়, জাপানসহ কয়েকটি উন্নত দেশ বাংলাদেশি সোনালি ব্যাগ আমদানির বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ পাটকল সংস্থার সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোবারক আহমেদ খান দীর্ঘ সময় ধরে একটিমাত্র প্রকল্পে বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখছেন। চারদিকে এত উন্নয়নের ডামাডোলে দেশের ‘স্বর্ণসূত্র’সংশ্লিষ্ট একটি শিল্পের বিকাশে মাত্র ২০০ কোটি টাকার জোগান কেন মিলছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। মোবারক আহমেদ বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে দাবি করেছেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত সব পাট দিয়ে সোনালি পলিমার ব্যাগ তৈরি করা সম্ভব হলে তা বিশ্ব-চাহিদার এক-চতুর্থাংশ মেটাতে পারে।
আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে সুপারিশ করি যে, সোনালি ব্যাগ প্রকল্পকে সর্বাঙ্গীণভাবে সফল করে তুলতে সম্ভব সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।