মূল্যবৃদ্ধির চাপ

বাজার তদারকি ও খোলাবাজারে বিক্রি বাড়ান

কয়েক দিন আগে সরকার এলপিজি বা তরলীকৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। পাইপলাইনের প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোরও প্রস্তাব আছে। ঢাকা ওয়াসা পানির দাম আরও ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজের দামও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা যে আরও কঠিন হয়ে পড়ছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

করোনাকালে একদিকে তাদের আয় কমে গেছে, অন্যদিকে বাড়তি দামের খড়্গ ঝুলছে মাথার ওপর। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত সোমবার ঢাকা ওয়াসার বিশেষ বোর্ড সভায় পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা দফায় দফায় দাম বাড়ালেও মানসম্মত পানি সরবরাহ করতে পারছে না। অনেকেই বাজার থেকে পানি কিনে খাচ্ছেন। এ বিষয়ে গ্রাহকেরা অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি।

গত বছর নভেম্বরে বিভিন্ন মহলের আপত্তি উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোরও প্রস্তাব করেছিল জ্বালানি মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি দায়সারাভাবে দেওয়া হয়েছে—এই অজুহাতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) খারিজ করে দেয়। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে বিধি মেনে নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় সেবার দাম যখন সরকার বাড়িয়ে দিল বা বাড়ানোর তোড়জোড় করছে, তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে চলেছে; যদিও সরকার বলছে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চাল মজুত আছে। তাহলে কেন দাম বাড়ছে? এ বিষয়ে মজুতদার ও মিলমালিকদের কারসাজির কথা বলা হলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েই চলেছেন। জানুয়ারি মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তেলের দাম আপাতত বাড়বে না। ৬ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা দাম বাড়ল। এ ছাড়া পেঁয়াজের বাজার বরাবরই অস্থিতিশীল। শীতের মৌসুমে সবজির দাম সাধারণত কম থাকে। কিন্তু এবারে সবজির দামও চড়া।

বাজারে কেন এই অবস্থা তৈরি হলো, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। ব্যবসায়ীদের কারসাজি কিংবা পরিবহনের চাঁদাবাজি—যে কারণেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ুক না কেন, সরকার তো নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বাজার তদারকি জোরদার করা, যাতে কেউ বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিতে না পারে। দ্বিতীয়ত, নিজস্ব চ্যানেলে কম দামে খোলাবাজারে প্রচুর পণ্য বিক্রি করে। বর্তমানে টিসিবির মাধ্যমে যে অল্প পরিমাণ পণ্য বিক্রি করা হয়, তা বাজারে কোনো কোনো প্রভাবই ফেলতে পারছে না।

এ অবস্থায় সরকারকে যে কাজটি করতে হবে, তা হলো খোলাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রি বাড়ানো। গুটিকয় শহর এলাকায় এই কার্যক্রম চালালে হবে না, প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত খোলাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। সামনে রোজায় কোনো সিন্ডিকেট যাতে নতুন করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো থেকেও সরকারকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।