সব কৃষকের কাছে সুবিধা পৌঁছাতে হবে

বাউ সয়েল টেস্টিং কিট

বাংলাদেশের পরিবেশ বৈচিত্র্যময়। একেক জায়গার পরিবেশ একেক রকম। এক অঞ্চলের মাটির সঙ্গে অন্য অঞ্চলের মাটির পার্থক্য রয়েছে। তাই মাটির পুষ্টি উপাদান সব জায়গায় এক রকম নয়। এ জন্য ফসল বোনার আগে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। তা না হলে ফলন ভালো হয় না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগ উদ্ভাবিত ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ বেশ কাজে আসবে বলে আমরা মনে করছি।

শনিবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, বাউ সয়েল টেস্টিং কিটের মাধ্যমে মাটিতে কী পরিমাণ সার দিতে হবে, তা খুব সহজেই জানা যায়। এই যন্ত্রের ব্যবহারও খুব সহজ। কৃষক মাঠে থেকেই এ পরীক্ষা করতে পারেন। এ কিট দিয়ে মাটি অম্ল না ক্ষারীয়, তা জানা যায় এবং ফসলের দরকারি নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস, অন্যান্য উপাদানসহ অণুজীবের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। এতে পরিমিত রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির গুণাগুণ অক্ষত থাকে এবং ফলন ভালো হয়। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সুতিয়াখালী গ্রামের কৃষকেরা গত বছর বাউ সয়েল টেস্টিং কিটের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষা করে মাটি ও ফসলের চরিত্রানুযায়ী রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন। ফলন আগের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। আর মাত্রাতিরিক্ত সার প্রয়োগ করতে না হওয়ায় তাঁদের উৎপাদন খরচও কমেছে।

আমাদের মতো কৃষিনির্ভর দেশের এ ধরনের কিটের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমাদের দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সব কৃষকের ফসল উৎপাদনের সঠিক জ্ঞান নেই। জৈব ও পুষ্টি উপাদান এবং অঞ্চলভেদে মাটির গুণগত মান ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার ফসলভেদে মাটিতে রাসায়নিক সারের চাহিদাও ভিন্ন হয়। মাটিতে সারের চাহিদা না জেনেই কৃষকেরা বেশি উৎপাদনের আশায় জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন। কীটনাশক ছিটান। এতে নষ্ট হয় মাটির উর্বরতা শক্তি। ফলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফসল উৎপাদন হয় না। উল্টো বাড়িয়ে দেয় ফসলের উৎপাদন খরচ। তাই দেশের সব কৃষকের কাছে এই কিটের উপকারিতার কথা বেশি বেশি করে প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি কিটটি বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষকদের কাছে যাতে পৌঁছায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন ধরে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসছে। তারা মাটি পরীক্ষা করে কৃষকদের কোন জমিতে কী পরিমাণ সার দিতে হবে, তা বলে দেয়। এই কিট কেনার মাধ্যমে ইনস্টিটিউট তাদের সেবা কার্যক্রম জোরদার করতে পারে।