পাটশিল্প পুনরুজ্জীবিত হোক

বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহার

একটা সময় ছিল যখন ‘সোনালি আঁশ’ নিয়ে বাঙালির গর্বের শেষ ছিল না। সেই দিন অস্ত গেছে। পাটজাত পণ্যের জায়গায় ঢুকে গেছে প্লাস্টিক ও পলিথিনজাতীয় পণ্য। এতে একদিকে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে; অন্যদিকে পাটচাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। বহু পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

পাটের বস্তা, দড়ি ও চট—এসবই পচনশীল। এগুলো সহজে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। কিন্তু পাটজাত পণ্যের জায়গা দখল করেছে যে পলিথিন কিংবা প্লাস্টিকের পণ্য, সেগুলো বহু বছরেও মাটির সঙ্গে বিলীন হয় না। এগুলো মাটির উর্বরতা শক্তি কমায়। মাটিতে বিষক্রিয়া তৈরি করে। তবে পাটের তুলনায় পলিথিনে খরচ কম বলে এর চাহিদা বেশি। এই খরচ বাঁচাতে গিয়ে সমগ্র পরিবেশের বিরাট ক্ষতি করা হচ্ছে।

আশার কথা হলো, দেরিতে হলেও সরকার এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে। ধীরে ধীরে পাটজাত পণ্য, বিশেষ করে পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়াতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। আইন করে বিভিন্ন পণ্য মোড়কীকরণে এ ধরনের বস্তা ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আনা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী প্রথম ধাপে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি—এই ছয় পণ্য মোড়কীকরণে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। পরে গত বছর মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনে, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদ-কুঁড়া—এই ১১টি পণ্য পাটজাত মোড়কে বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য নির্ধারণ করা হয়।

আশার কথা হচ্ছে, এই তালিকায় এ মাসেই যুক্ত হয়েছে আরও দুটি পণ্য। পণ্য দুটি হচ্ছে পোলট্রি ও ফিশ ফিড বা হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার। ফলে এখন সব মিলিয়ে ১৯টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের বস্তা বাধ্যতামূলক করা হলো। আইন অনুযায়ী এসব পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে সর্বোচ্চ দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দেশে প্রতিবছর ১০০ কোটির বেশি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হবে। এটি কৃষকদের জন্য একটি বড় ধরনের সুখবর। আরও পণ্য মোড়কীকরণে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা গেলে এবং এই আইনের সঠিক বাস্তবায়ন হলে আবার হু হু করে চট ও বস্তার চাহিদা বাড়বে। মৃতপ্রায় চটকলগুলো আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে। পরিবেশ ধ্বংসকারী পলিথিনের ব্যবহার কমবে। দেশ বৃহত্তর ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে। কৃষক বাঁচবেন। সেই দিক থেকে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো উচিত।