বরিশাল সিটিতে অপ-উন্নয়ন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প শুরুই হয় সম্ভাব্যতা যাচাই ও নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে। সেখানেই বেরিয়ে আসে প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য কি না এবং এর জন্য কী রকম বরাদ্দের প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একেবারেই সাধারণ এ নিয়ম না মেনে একের পর এক প্রকল্প শুরু হয় বরিশাল সিটি করপোরেশনে। যার ফলে প্রকল্পগুলো একরকম মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে গচ্চা যাচ্ছে সরকারের ৭৩ কোটি টাকা। অপ-উন্নয়নের বড় ধরনের নজির বলা যায় প্রকল্পগুলোকে। জনগণের কল্যাণের জন্য যে উন্নয়ন, সেটি এভাবে ব্যর্থ হলো তা খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বরিশালের তিনটি প্রকল্প দীর্ঘদিনেও আলোর মুখ দেখেনি। প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা পানি শোধনাগারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর পাঁচ বছরেও সেগুলো চালু হয়নি। দুই দফা ব্যয় বাড়িয়ে ২৫ কোটি টাকায় বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি সাত বছরেও। পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের দুই প্রবেশদ্বারে নির্মাণাধীন সিটি গেট দুটিও অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। শোধনাগারের কাজ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। বাকি দুটি প্রকল্প সিটি করপোরেশনের অধীনে।

পানি শোধনাগারের জন্য নদীর পাশে স্থান বাছাইয়ে শুরু থেকে আপত্তি ছিল। সেটি আমলে না নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। যার ফলে শোধনাগারটি এখন নদীভাঙনের শিকার হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া লক্ষ্যমাত্রার দৈনিক ছয় লাখ লিটার পানি শোধনের পরে তা সংরক্ষণের জন্য ছিল না কোনো রিজার্ভার। শোধিত পানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইনও তৈরি করা হয়নি। দীর্ঘদিনেও চালু না করায় নির্মিত শোধনাগারটির যন্ত্রপাতিগুলোও নষ্ট হওয়ার পথে এখন। অন্যদিকে আধুনিক সুবিধাসংবলিত পাঁচতলা বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন নিয়ে ঠিকাদারদের অনিয়মের অভিযোগ আছে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বরিশাল মহানগরের দুই প্রান্তে প্রবেশমুখে সিটি গেট নির্মাণ প্রকল্পটির কাজেও। বাড়তি ব্যয়ের কারণে প্রকল্প দুটির কাজ থমকে আছে বছরের পর বছর ধরে। যেহেতু এসব প্রকল্প তেমন জনহিতকর নয়, এর জন্য সিটি করপোরেশনকে বাড়তি বরাদ্দ দিতেও ইচ্ছুক নয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

শোধনাগারটি নির্মিত হলে নাগরিক সুবিধা বাড়ত। এখন তা থেকে বঞ্চিত হলো নগরবাসী। ফটক নির্মাণের নামে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সড়কের অর্ধেক বন্ধ করে রাখায় দুর্ভোগও বেড়েছে। উন্নয়নের নামে প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন জগাখিচুড়ি নতুন কিছু নয়। এর জন্য কারও কোনো জবাবদিহি নেই বলে বরিশাল সিটির এসব অপ-উন্নয়ন আমাদের দেখতে হলো। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কি সক্ষম নন? এ নৈরাজ্য বন্ধ হোক।