ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য মৌলভীবাজারের খাইঞ্জার হাওর এলাকায় একটা ডাম্পিং স্টেশন আছে। পৌরসভার বর্জ্য এত দিন সেখানেই ফেলা হতো। ডাম্পিং স্টেশনটা এখন সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সেই কাজ শুরুও করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। কাজটা করতে কম করেও মাস ছয় সময় লাগবে। এই সময় কোনো ময়লা ওখানে ফেলা যাবে না। কিন্তু ময়লা তো আর কারখানায় তৈরি হয় না যে চাইলেই তত দিন পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ রাখা যাবে। জীবজন্তুর মতো একটা শহরও নিয়মিত বর্জ্য ত্যাগ করেই যাবে। এই বর্জ্য তাহলে কোথায় যাবে?
কেন, বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের খালি জায়গা আছে না? ওখানেই ময়লা ফেলা হোক। মেয়র ফজলুর রহমান তো বলেই দিয়েছেন, ‘পাবলিকের জায়গায় তো আর ময়লা ফেলা যাবে না।’ কথাটার দুটি নিহিতার্থ আছে, সরকারি সম্পত্তির মা-বাপ নেই, তাই সরকারি জায়গায় অন্যায় করা যাবে; আরেকটা হচ্ছে এই জায়গার যারা বাসিন্দা, অর্থাৎ বনের পশুপাখি, এই বিষয়ে তাদের তো আর আপত্তি করার উপায় নেই। এসব বর্জ্য খেয়ে যদি তারা মারাও যায়, প্রতিবাদে তারা মামলা করবে না। তাই ৪ এপ্রিল থেকে সংরক্ষিত বনের নিচু ও খালি জায়গায় ময়লা ফেলা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্ন উঠতে পারে, খালি জায়গা তো আসলেই নেই। ময়লা তাহলে কোথায় ফেলব? সে ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তার লিখিত অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল, বন বিভাগের কথায় বোঝা যাচ্ছে, তারা সেটা নেয়নি। তার চেয়ে বড় কথা, যেখানেই ফেলা হোক, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জায়গাটাকে তো আগে উপযোগী করে নিতে হবে। চারদিকটা ঘেরাওয়ের ব্যবস্থা তো অন্তত করে নেবে। ইচ্ছা হলো, আর একটা খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা শুরু করলাম, এটা তো হতে পারে না। অথচ বাংলাদেশের অধিকাংশ সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মসূচিরই এই চিত্র: বিকল্প ব্যবস্থা না করেই মাঠে নেমে পড়া। বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা না করেই সংস্কার করা হচ্ছে বড় বড় রাস্তা, কোনো ধরনের পানি দেওয়ার ব্যবস্থা না করেই যথেচ্ছ চলে নির্মাণকাজ, ফলে দিনের পর দিন ধুলার রাজ্যে কাটায় মানুষ। বর্ষিজোড়া ইকোপার্কেও তা-ই ঘটেছে, আজ মনে হলো, কালই ফেলা শুরু হলো আবর্জনা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে, আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ, কোনো বাধা না পেয়ে যত্রতত্র আবর্জনা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাতাস।
শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব যাদের, তারাই যদি এ রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে, তাহলে সাধারণ নাগরিককে তারা কী শিক্ষা দেবে?