অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করুন

বদরগঞ্জে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কসাইখানা

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

এ দেশে সরকারি জায়গা দখল নতুন বা বিরল কোনো ঘটনা নয়। কোনো সরকারি জায়গা খালি পড়ে থাকবে আর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা তুলে সেই জায়গা দখল করবেন না, এটিই বরং অস্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। কিন্তু ৬২ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা একটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৬০ শতক, অর্থাৎ প্রায় সবটাই দখল করে সেই জায়গাকে আক্ষরিক অর্থে বাজার ও ভাগাড় বানানোর ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। এ অচিন্তনীয় কাণ্ড ঘটেছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, রাধানগর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব জায়গা রয়েছে ৬২ শতক। এর মধ্যে কেন্দ্রের দখলে আছে সর্বোচ্চ ২ শতক জায়গা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পাকা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। তিন বছর ধরে এর ভেতরেই প্রতিদিন গরু-ছাগল জবাই ও কাটাকাটি হচ্ছে। জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে মুরগি, মাছ, পান ও চায়ের দোকান। গড়ে তোলা হয়েছে লালদীঘি ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, মোটর শ্রমিক সমিতির কার্যালয় ও টিকিট কাউন্টার। পশু জবাইয়ের পর সেখানেই গরু-ছাগলের নাড়িভুঁড়ি ফেলা হচ্ছে। পাশের বাজারের সব ময়লা-আবর্জনাও সেই ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে। এতে আশপাশের বাতাস ভয়ানক বিষাক্ত গন্ধে ভরে থাকছে। ভয়ানক গন্ধের কারণে চিকিৎসকেরা এ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেশিক্ষণ থাকতে চান না। রোগীরাও সেখানে আসতে চান না।

এ দখলদারি ঠেকানো যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরাই মূলত দখলদার হয়ে আছেন। দখলদারদের মধ্যে রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনও আছেন। তিনি কেন্দ্রের ভেতরে গড়ে তোলা লালদীঘি ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি। যেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেখানে এভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে শুধু হাতে গোনা কয়েকজনের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা বলছেন, জায়গা দখলমুক্ত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। সাড়া না মেলার কারণ কী, তা জানা জনগণের অধিকার। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো একটি স্পর্শকাতর জায়গা কীভাবে দিনের পর দিন কসাইখানা, মাছের বাজার, হাঁস-মুরগির দোকান ও ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তার সুস্পষ্ট জবাব পাওয়া তাদের অধিকার। এ জবাব সরকারকেই দিতে হবে। পাশাপাশি জনগণের চিকিৎসা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে পকেট ভর্তি করা লোকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা এবং অবিলম্বে সে জায়গা থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করাও বিধেয়।