নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে হবে

ফিরে এসো নীলগাই

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

নীলগাইয়ের মতো এমন বিভ্রান্তিকর প্রাণিনাম বাংলায় আর দ্বিতীয়টি আছে কি না সন্দেহ। ওই অর্থে মোটেও এটির গায়ের রংকে নীল বলা যাবে না। পুরুষ নীলগাই গাঢ় ধূসর, প্রায় কালচের কাছাকাছি আর মেয়ে নীলগাইয়ের রং লালচে বাদামি। তার চেয়ে বড় কথা মোটেও এটি গরু নয়, দেখতে বরং অনেকটা ঘোড়ার মতো। তবে এটি ঘোড়াও নয়, নীলগাই এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ অ্যান্টিলোপ। এক শ বছর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ে প্রচুর নীলগাই দেখা যেত। আমাদের বেহিসাবি অনাচারে আরও অনেক প্রাণীর মতো নীলগাইও একসময় নাই হয়ে যেতে থাকে। ১৯৪০ সালের দিকে পঞ্চগড়ে সর্বশেষ স্থানীয় নীলগাইটি দেখা যায়। তারপর প্রায় ৭৮ বছর এ অঞ্চলে আর তাদের দেখা যায়নি।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর একটি স্ত্রী নীলগাই ধরা পড়ে। ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দায় ধরা পড়ে একটি পুরুষ নীলগাই। ওই বছরই ১ এপ্রিল পত্নীতলায় ধরা পড়ে আরেকটি নীলগাই। সর্বশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরেকটি নীলগাই। ধারণা করা হচ্ছে, দলছুট হয়ে বা খাবারের খোঁজে ভারত থেকে নীলগাইগুলো এপারে আসছে। ২০ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ অঞ্চলে চারটা নীলগাইয়ের সন্ধান মেলায় আমাদের মধ্যে এই আশাবাদ জাগতেই পারে যে পূর্ব ঠিকানায় আবার নীলগাইদের আবাস গড়ে উঠতে পারে।

কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কিছুতেই সেটা আমরা হতে দেব না। নইলে এমন সুন্দর একটা প্রাণীকে দেখে প্রথমেই কেন ওটাকে খাওয়ার কথাই আমাদের মাথায় আসে। সর্বশেষ ধরা পড়া নীলগাইটিকে ফসলের খেতে ছোটাছুটি করতে দেখে গ্রামবাসীর মাথায় ঠিক ওই চিন্তাটাই এসেছিল। ওটাকে ধরে চিন্তাটাকে তারা বাস্তবে রূপ দিতে উদ্যত হয়েছিল। জবাইরত অবস্থায় গাইটিকে উদ্ধার করে বিজিবি। প্রাণীটির গলা থেকে তখন রক্ত ঝরছিল। কাটা জোড়া লাগাতে ১০–১২টি সেলাই লেগেছে।

অথচ দেশে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট আইন আছে, রয়েছে জরিমানাসহ কারাদণ্ডের বিধান। কিন্তু যথার্থ প্রয়োগ নেই। তার চেয়ে বড় কথা, এগুলো যে আমাদের অনন্য সম্পদ, সাধারণ মানুষের মধ্যে এ সচেতনতার বড় অভাব। প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা আমাদের একটা সাধারণ প্রবণতা। বিনা কারণে কুকুর পেটানো, গুলতি দিয়ে পাখি মারা আমাদের কাছে একটা স্বাভাবিক দৃশ্য। এটা যে অন্যায়, আমাদের এটা মনেই হয় না, সন্তানদেরও আমরা এই শিক্ষা দিই না। যত দিন না এই বোধ আমাদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে, তত দিন শুধু আইনে কোনো কাজ হবে না। শুধু মানুষ নয়, সবকিছু নিয়েই আমাদের এই জগৎ—আমাদের মধ্যে এই বোধ জাগ্রত না হলে শুধু আইন দিয়ে কাজ হবে না।