করোনাকালে মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াফেরত অভিবাসীদের বকেয়া টাকা আদায় এবং দেশে তাঁদের পুনর্বাসনে কিছু পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফেরত আসা ১৬ হাজারের বেশি শ্রমিকের উল্লেখযোগ্য অংশই এক ঝটিকায় বিতাড়িত হয়েছেন। তঁাদের অনেকেই পাওনা টাকা আদায় করে ফিরতে পারেননি। তঁারা আদৌ সেখানে ফিরতে পারবেন কি না, তা অনিশ্চিত। সুতরাং সরকার এই পাওনা টাকা আদায়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে পারে। বিদেশি সরকারগুলো অন্তত আমাদের শ্রমিকদের বকেয়া অর্থ আদায় করে দিতে অসহযোগিতামূলক আচরণ করবে বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি প্রত্যাগত ১৬ হাজার প্রবাসী শ্রমিকই শেষ নয়, বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে এ প্রক্রিয়ায় আরও অনেক শ্রমিক ফিরবেন। সুতরাং তঁাদের জন্য একটি বিশেষ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
সোমবার উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের কল্যাণে গঠিত সংস্থা রামরু মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ–সংক্রান্ত একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবিনার) রামরু ৫০ প্রবাসীর ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় দেখেছে, প্রত্যাগতদের মাত্র ২৬ ভাগ বকেয়া টাকা নিয়ে ফিরতে পেরেছেন। অবশিষ্টরা গড়ে পৌনে দুই লাখ করে টাকা ফেলে এসেছেন। এ পাওনা অর্থ ফেরত আনতে বিদেশে আমাদের মিশনগুলোর সক্রিয় ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই।
এর মধ্যে উদ্বেগজনক তথ্য হলো করোনাকালে প্রবাসী শ্রমিকেরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ঘর
থেকে বেরোনো কিংবা কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে টহলরত নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের আটক করে। গড়ে ২০ দিন বন্দী থাকার পর শূন্য হাতে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। তাঁদের দাবি, বন্দিদশায় এক খাটে তিনজনকে ঘুমাতে বাধ্য করার মতো ঘটনাও ঘটে। এ আশঙ্কা অমূলক নয় যে সামনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের আরও অনেক প্রবাসী শ্রমিক এ পরিস্থিতির শিকার হবেন।
তবে শুধু বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকেরাই এ পরিস্থিতি বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন, বিষয়টি তা নয়। বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক প্রেরণকারী অন্য আরও অনেক দেশের অভিজ্ঞতার সঙ্গে কমবেশি বাংলাদেশি শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা মিলে যাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্দিষ্ট অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রতিকার চাইতে একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের কথাও আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। অতীতে এ ধরনের ডামাডোলপূর্ণ অবস্থায় জাতিসংঘের তদারকিতে একটি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপের সুফল মিলেছে।
রামরুর উদ্যোগে আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও অংশ নেন। কিন্তু তাঁদের তরফে প্রত্যাগত শ্রমিকদের বকেয়া টাকা আদায় বা দেশে তাঁদের পুনর্বাসনে নির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি গ্রহণের ব্যাপারে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জুলাই থেকে সরকারঘোষিত প্রণোদনার অংশ হিসেবে ২০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের কথা আমরা জানি। কিন্তু প্রত্যাগতরা ঋণ নেওয়াটাকে উত্তম বিকল্প মনে না–ও করতে পারেন।
প্রবাসী শ্রমিকেরা সুনির্দিষ্টভাবে দেশকে কিছু দিয়েছেন। দুর্দিনে তঁাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সুতরাং ঋণ কর্মসূচির পাশাপাশি বিশেষ পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়া দরকার। এককালীন অনুদান বা সহায়তা তাঁদের দরকার হবে। মিশনগুলোকে নির্দেশ দিতে হবে, যাতে তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে টাকা তুলতে সচেষ্ট হয়।