প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে বাংলাদেশে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার উত্তরোত্তর বেড়েছে। কিন্তু প্লাস্টিকের এ যথেচ্ছ ব্যবহার যে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, সে বিষয়ে আমরা সচেতন নই। সোমবার রাজধানীতে ‘টুওয়ার্ডস মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের কথায় এ উদ্বেগের কথাটিই উঠে এসেছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে রাজধানীতে মাথাপিছু ২৩ কেজি প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয়, যা ২০০৫ সালে ছিল ৯ কেজি। ঢাকার বাইরে ২০০৫ সালে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার করা হতো ৩ কেজি, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কেজিতে। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়, তার ১০ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য থেকে আসে। প্লাস্টিক বর্জ্যের ৪৮ শতাংশ মাটিতে পড়ে আর ৩৭ শতাংশ পুনরায় ব্যবহৃত হয়; ১২ শতাংশ পড়ে খাল-নদীতে এবং ৩ শতাংশ নালায় গিয়ে মেশে।

পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাংলাদেশের চেয়েও বেশি। কিন্তু সেখানে বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা উন্নত; প্রায় পুরোটাই পুনর্ব্যবহার করা হয়। ফলে পরিবেশগত ক্ষতি কম হয়। আমরা প্রতিবছর লাখ লাখ টন বর্জ্য মাটি, নদী ও খালে ফেলে দিই। প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যে অনেক নদী-খাল ভরাট হয়ে গেছে। খনন করেও পুরোনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। আবার উজান থেকেও নদীর স্রোতে অনেক বর্জ্য আমাদের এখানে এসে জমা হয়। ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সমুদ্র উপকূলে প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দশম।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। প্রশ্ন হলো এরই মধ্যে যেসব খাল-নালা, নদী, জলাশয়, নর্দমা ভরাট হয়ে গেছে, সেগুলো উদ্ধারে জরুরি কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। বর্তমানে দেশ উৎপাদিত বর্জ্যের ১০ শতাংশ প্লাস্টিক থেকে আসে, যা অনতিবিলম্বে শূন্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পরিবেশদূষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। আগে মানুষ রাস্তাঘাটে, নদীতে, খালে প্লাস্টিক ও পলিথিনের বর্জ্য ফেলত লুকিয়ে ছাপিয়ে, এখন প্রকাশ্যে।

সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক পণ্য, বিশেষ করে পাটের ব্যাগের ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন। খুবই ভালো কথা। পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগের ব্যবহার অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। এ নিয়ে সরকারের উদ্যোগ-শোরগোলও কম ছিল না। কিন্তু ফলাফল শূন্য। বিএনপি সরকারের আমলে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অনেক পলিথিন কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে ও সরকারের উদাসীনতায় দেশে ফের ‘পলিথিন যুগ’ ফিরে এসেছে।

বর্তমান বাস্তবতায় প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার হয়তো আমরা বাতিল করে দিতে পারব না। কিন্তু এর পরিবেশগত ক্ষতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতেই হবে। অন্যথায় ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে; যার আলামত জল-স্থলে উদ্বেগজনক হারে দৃশ্যমান। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।