আছিয়া দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলেন

প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা

একটি বিড়াল কয়েক দিন ঠিকমতো খেতে পারছে না। তাকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন তার মালিক। তিনি বিড়ালটিকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন। হাসপাতাল থেকে জানানো হলো, বিড়ালটির গলায় কাঁটা বিঁধে থাকতে পারে। ওষুধ দেওয়া হলো। চিকিৎসক জানালেন, ভয়ের কিছু নেই, সে সুস্থ হয়ে যাবে। শুনে মালিক আশ্বস্ত হলেন। হাসিমুখে বিড়ালটি নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরলেন।

ইউরোপ-আমেরিকায় এটি কোনো খবর নয়। এটি অতি সাধারণ ঘটনা। সেখানে পোষা প্রাণী অসুস্থ হলে তাদের হাসপাতালে না নেওয়াটাই অস্বাভাবিক। বাংলাদেশে বিত্তবান কিছু পরিবারও পোষা প্রাণী অসুস্থ হলে তাদের হাসপাতালে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই দায়িত্ব পালনের অনুঘটক হিসেবে প্রাণীটির আর্থিক মূল্যমান প্রধানত কাজ করে থাকে।

পোষা বিড়ালটির মালিকের ভূমিকায় যখন আমাদের দেশের একজন হতদরিদ্র শ্রমজীবী নারীকে পাওয়া যায়, তখনই তা সংবাদপত্রের খবর হয়ে ওঠে। গাজীপুরের শ্রীপুরের আছিয়া খাতুনের পোষা বিড়াল ‘মিনু’কে নিয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়ার ঘটনা গত শুক্রবার প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে। ঘটনাটি সবাইকে নাড়া দিয়ে গেছে।

একটি পোষা প্রাণী অসুস্থ হলে সেটির মালিক চিন্তাগ্রস্ত হবেন এবং সেটিকে চিকিৎসকের কাছে নেবেন—এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে এমন ঘটনা বিরল। পশুপাখির প্রতি সহমর্মিতার অভাবের এই দুঃসময়ে একজন আছিয়া খাতুনের এই মানবিক মূল্যবোধ নিঃসন্দেহে অনুসরণীয়। মানুষের অসুখ হলে তারা তা বলতে পারে, চিকিৎসা নিতে যেতে পারে, কিন্তু অবলা প্রাণী তা পারে না। এ কারণে তাদের দুর্ভোগ বেশি। তাদের সেই দুর্ভোগ আছিয়ার মতো মানুষেরা উপলব্ধি করেন। সে উপলব্ধি গোটা সমাজের চেতনাকে নাড়া দেয়।

প্রাণীর প্রতি আছিয়া খাতুনের ভালোবাসা সবাইকে এই বার্তা দিয়ে গেল, আর্থিক সচ্ছলতা থাকা না থাকার সঙ্গে পশুপ্রেমের সম্পর্ক নেই।

আমাদের অনেক বেসরকারি সংগঠন পোষা প্রাণীর প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেটি উৎসাহব্যঞ্জক। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের আরও ভূমিকা থাকা উচিত।

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ‘দ্য আমেরিকান সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস’ নামের একটি পোষা প্রাণী অভিযোজন কেন্দ্র আছে। ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের জন্য কাজ করছে। তারা প্রাণী উদ্ধার, দাতাদের কাছ থেকে গ্রহণ ও প্রাণীদের কল্যাণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে।

আমাদের দেশেও সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।