করোনাসংকটের শুরু থেকে পোশাকশ্রমিকেরা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সেসব কারখানার শ্রমিকেরা অনেক কষ্ট করে বাড়ি চলে যান। আবার সাধারণ ছুটি চলাকালেই মালিকেরা কারখানাগুলো খোলার ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকদের কর্মস্থলে যোগ দিতে বলার পরে শ্রমিকেরা দূরদূরান্ত থেকে ট্রাকে, ভ্যানে, রিকশায় এমনকি মাইলের পর মাইল হেঁটে কাজে যোগ দিতে আসেন। কিন্তু প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে মালিকেরা আবার কারখানা বন্ধ করে দিলে ওই শ্রমিকেরা আবারও অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন।
শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে মার্চ মাসের মজুরি পরিশোধের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ বলেছিল ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মজুরি পরিশোধ করা হবে। কিন্তু ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত অনেক কারখানায় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়নি। দুই থেকে ছয় মাসের মজুরি বকেয়া আছে, এমন অনেক কারখানার মালিক শ্রমিকদের মজুরি না দিয়েই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। শ্রমিকেরা মজুরি না পেয়েও কাজ করেছেন এই আশায় যে কারখানা চালু থাকলে একসময় তাঁরা মজুরি পাবেন। কিন্তু মালিকেরা কারখানাই বন্ধ করে দিয়েছেন। এই শ্রমিকেরা এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও বিক্ষোভ করছেন, সড়ক অবরোধ করেছেন। কারণ, তাঁদের উপায় নেই। মজুরি না পেলে তাঁদের সপরিবার অনাহারে থাকতে হবে।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, ৮০ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়েছে। আরও বলেছেন এমন মালিকও আছেন, যাঁরা বিজিএমইএর সদস্য নন। তাহলে কি বিজিএমইএ তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে চায়? পোশাকশিল্পে শ্রমিকসংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। তাদের মধ্যে ২০ শতাংশ মজুরি না পেয়ে থাকলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৮ লাখ। এই বিপুলসংখ্যক মানুষ সন্তানসন্ততি নিয়ে বাঁচবেন কীভাবে?
বিজিএমইএর সভাপতি ২০ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট মালিকদের অনুরোধ করেছেন। তাঁরা অনুরোধ রাখলে ভালো। না রাখলে কী হবে? যেসব মালিক শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রেখে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন, তঁাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর সরকার তো রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে; শ্রমিকদের মজুরি পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকারকেও তৎপর হবে। অবিলম্বে সব পোশাকশ্রমিকের বকেয়াসহ মার্চ মাসের মজুরি পরিশোধ করা হোক।