পোশাককর্মীদের কর্মপরিবেশ দিন

ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ বছরের জন্য ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। অ্যাকর্ডের অধীনে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি কারখানার পরিদর্শন হয়েছে। ইতিমধ্যে কারখানাগুলো অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটির ৯০ শতাংশ সংশোধন করেছে। আর অ্যালায়েন্সের অধীনে থাকা ৬৫৪টি কারখানার সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে ৯৪ শতাংশ। অ্যালায়েন্সের অধীন ৪৫০টি কারখানার সব কটির সংস্কারকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বিদেশের সংগঠন যখন তাদের কাজ প্রায় শতভাগ করে ফেলেছে, সেখানে আমাদের সরকারের উদ্যোগে বানানো ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীনে থাকা কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ চলেছে একেবারেই ঢিমেতালে। তারা ৭৪৫টি কারখানার মধ্যে ৫২৭টির ৩০ শতাংশের বেশি সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেনি।

লক্ষণীয় হলো প্রাথমিক পরিদর্শনের পর ৩৬ মাস পার হয়ে গেলেও সংস্কারকাজে অগ্রগতি হয়নি। এনটিএপির অধীনের ৭৪৫টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে অধিকাংশেরই সংস্কারকাজে পিছিয়ে। ২১৮টি কারখানার সংস্কারকাজ ৫০ শতাংশের বেশি শেষ হলেও বাকি ৫২৭টি কারখানার সংস্কারকাজ ৩০ শতাংশের বেশি নয়। এনটিএপির অধীনের কারখানাগুলোর বৈদ্যুতিক ত্রুটির মাত্র ৩৯ শতাংশ এবং অগ্নিসংক্রান্ত ত্রুটির মাত্র ৩১ শতাংশ সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। উদ্বেগের কথা হলো সংস্কারকাজে পিছিয়ে থাকা কারখানার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। এনটিএপির অধীনের দুই শতাধিক কারখানার অগ্রগতি ২০ শতাংশের কম। তাই এসব কারখানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিল ডিআইএফই। সেই দুই শতাধিক কারখানার মধ্যে ১৩১টি তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য। সে কারণে এসব কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সায় দেননি বিজিএমইএর নেতারা। তাঁরা জানুয়ারিতে আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দেন। পরে পিছিয়ে যান ডিআইএফইর কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, পোশাক কারখানার মালিকদের গাফিলতির কারণেই ত্রুটি সংস্কারকাজে অগ্রগতি বেশ কম হয়েছে। বহুবার তাগাদা দিয়েও কাজ করানো যাচ্ছে না।

এটি একটি সরকারি তদারকি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য হতে পারে না। অ্যাকর্ড বা অ্যালায়েন্সের মতো বিদেশি ক্রেতারা যদি তাদের অধীনের কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে সরকার কেন ব্যর্থ হবে? মালিকদের বুঝতে হবে, শ্রমিকেরা সোনার ডিম দেওয়া হাঁস। ডিম পেতে হলে হাঁস বাঁচাতে হবে। তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই সোনার হাঁসকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে উচ্চ মুনাফার লোভ ছেড়ে আগে তাঁদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে।