মোংলার ঘটনার তদন্ত হোক

পুকুর খননে 'পুকুরচুরি'

প্রকৃতির দয়ায় সুজলা হয়ে ওঠা বঙ্গভূমির অধিবাসীরা এত দিন পানীয় জলের মূল্য বোঝেনি। অতি সহজলভ্যতা ও সহজপ্রাপ্যতা থেকে উদ্ভূত ‘পানির মতো সহজ’ কথাটির প্রাত্যহিক ব্যবহার সহজ হলেও আজকের দিনে পানির মতো কঠিন সমস্যা আর নেই। নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চলে বাস করেও বহু মানুষকে, বিশেষ করে উপকূলের মানুষকে স্বাদু পানির অভাবে পড়ার মতো দুর্ভাগ্য বরণ করতে হচ্ছে। শুধু ‘মন্দ কপাল’ নয়, ক্ষমতাধর কিছু মানুষের মন্দবুদ্ধির কারণেও 

তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখা যাচ্ছে বাগেরহাটের মোংলা এলাকায়।

সাগরবর্তী মোংলায় নদীর পানি লবণাক্ত। তাই সারা বছরই পানীয় জলের সংকট। হাতে গোনা কিছু মানুষের নির্মম লোভ সেই সংকটকে চরম সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মোংলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় একটি গভীর পুকুর খনন করা হয়েছে। কাগজ-কলমে ওই পুকুর ১০ ফুট গভীর। কিন্তু বাস্তবে সেই গভীরতা চার ফুটের বেশি নয়। ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘মিহি হাতের কাজে’ বাকি ছয় ফুট
গভীরতা ‘অদৃশ্যমান’ হয়ে গেছে। ‘পুকুরচুরি’র শিকার হওয়া এই পুকুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করতে চাইছে। কিন্তু পৌরসভা বলেছে, ১৪ কোটি টাকার পুকুর খননে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে তারা সন্দিহান। তাই এই পুকুর তারা নেবে না। এ নিয়ে দুই পক্ষে দ্বন্দ্ব বেধেছে। মাঝখান থেকে সুপেয় পানির অভাবে ছটফট করছে অর্ধলক্ষাধিক পৌরবাসী।

প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, পৌর এলাকার পানির সংকট নিরসনে পাঁচ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার একটি উচ্চ জলাধার এবং ৪৬ কোটি লিটার ধারণক্ষমতার একটি পুকুর ও পানি শোধনাগার আছে। সেখান থেকে পৌর এলাকার মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের চাহিদা পূরণ হচ্ছিল। চাহিদার কথা মাথায় রেখে ৪ লাখ ৫ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার একটি উচ্চ জলাধার, ৫১ কোটি লিটার ধারণক্ষমতার একটি পুকুর ও পানি শোধনাগারের কাজ শুরু হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর গত বছর এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে। কিন্তু কাজ শেষে দেখা যাচ্ছে বিরাট অনিয়ম হয়েছে। এ অনিয়মের কারণে যেটি দাঁড়াচ্ছে তা হলো জনগণের টাকায় জনগণের জন্য পুকুর খনন করা হলো, অল্প কিছু লোক কয়েক কোটি টাকা লুটপাট করে চলে গেল এবং কাজের কাজ কিছুই হলো না। পৌর এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষের পানির কষ্ট রয়েই গেল।

এই অনাচারের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের কড়া শাস্তি নিশ্চিত করা এবং পৌরবাসীর পানিসংকট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই দায় এড়ানোর চেষ্টা কিংবা অভিপ্রায় আরও বড় অনাচারের প্রতিফলন বলে গণ্য হবে।