বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের দায়ে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ও তাঁর পাঁচ সহযোগীর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়ার খবরটি যেমন স্বস্তির, তেমনি উদ্বেগজনকও। স্বস্তি এ কারণে যে বিদেশের মাটিতে হলেও শেষ পর্যন্ত দেশের সম্পদ পাচারকারীরা ধরা পড়েছেন। আর উদ্বেগের কারণ হলো হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল হোতা ও তাঁর সহযোগীরা নির্বিঘ্নে দেশ ত্যাগ করতে পেরেছেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার ২০১৯ সালে ভারতে পালিয়ে যান এবং পরে সেখান থেকে কানাডায়। ভারত ও কানাডা—দুই দেশেই তাঁর প্রচুর সম্পদ আছে। ভারতে গিয়ে পি কে হালদার নিজের পরিচয় গোপন করে শিবশঙ্কর হালদার নামে দেশটির পরিচয়পত্র, নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র, আয়কর দপ্তরের পরিচয়পত্র, আধার কার্ড ইত্যাদি সংগ্রহ করে সেখানে বাড়ি কেনেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। গত শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগের মধ্যে আছে, ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ ও বসবাস, বেনামে সম্পত্তি কেনা, আইনবহির্ভূতভাবে অর্থ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা।
উল্লেখ্য, পি কে হালদারের দখল করা চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেন। দুদক পি কে হালদারের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা হয়েছে।
পি কে হালদারের অর্থ পাচারের সঙ্গে তাঁর সহযোগীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন এবং তাঁরা অবৈধ আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পি কে হালদারের অনেক অপকর্ম আড়াল করেছেন। দুদক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পি কে হালদারের পাচার করা সম্পদের তথ্য চেয়ে দেড় বছর আগে কানাডা, সিঙ্গাপুর ও ভারতে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা অনুরোধ (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট—এমএলএআর) পাঠায়। একই সঙ্গে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়।
পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় অনেক বিশ্বাস্য তথ্য বেরিয়ে আসে। এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেও অনেকেই বিদেশে পালিয়ে যান। পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীরা ধরা পড়ার পর বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব হবে দ্রুত তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা। দেশটির সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে।
অতীতে অপরাধীদের সেই চুক্তির আওতায় ফেরত আনার দৃষ্টান্ত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের ফেরত আনা কঠিন হবে না, যদি সরকার আন্তরিক চেষ্টা চালায়। একই সঙ্গে ভারত, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনারও ব্যবস্থা করতে হবে।
কয়েক মাস আগে অনলাইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বেনামি মালিক ও বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানাও বিপুল পরিমাণ অর্থসহ পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বললেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। পি কে হালদার, সোহেল রানাসহ সব পাচারকারীকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।