বস্তুগত দিক থেকে চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, জগতে ‘বর্জ্য’ বা ‘বর্জনীয়’ বলে কিছু নেই। জগতে কিছুই ফেলনা নয়। সবকিছুর উপযোগিতা আছে। একজনের কাছে যা ফেলনা, অন্যজনের কাছে তা অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। তার মানে বস্তুর আপাত বা তাৎক্ষণিক উপযোগিতা আছে কি না, তার ওপরই বস্তুটি ‘প্রয়োজনীয়’ নাকি ‘বর্জ্য’, সেই সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। আজকে যে জিনিসের উপযোগিতা বুঝতে না পেরে আমরা বর্জ্য ভেবে ফেলে দিচ্ছি; কাল সেটিরই উপযোগিতা আবিষ্কৃত হতে পারে। রাতারাতি সেটি হয়ে উঠতে পারে মহামূল্যবান কিছু।
গরু–মহিষের হাড়, শিং আমাদের দেশে সম্পদজ্ঞানে কে কবে সংরক্ষণ করেছে? সবাই সেগুলোকে বর্জ্য হিসেবে ভাগাড়ে ফেলে এসেছে। কিন্তু এই ‘বর্জ্য’ দিয়েই এখন আশার আলো দেখাচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের অ্যাগ্রো রিসোর্স কোম্পানি লিমিটেড। ‘জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা/ধুলায় তাদের যত হোক অবহেলা’—কবিগুরুর এই কথা আবারও তারা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে। এতকাল আমরা গবাদিপশুর যে হাড় ও শিং ‘ধুলায় অবহেলায়’ ফেলে এসেছি, তা দিয়েই তারা বোতাম ও শোপিস বানিয়ে রপ্তানি করছে। তারা জার্মানি, স্পেন, অস্ট্রিয়া, চীন, হংকং প্রভৃতি দেশে বছরে ২০ কোটি টাকার হাড় ও শিংয়ের বোতাম রপ্তানি করে। তারা সৈয়দপুরের কারখানায় গরু-মহিষের শিং প্রক্রিয়াজাত করে বাহারি ডিজাইন বা নকশায় তৈরি করছে উন্নত মানের বোতাম। এই বোতাম দেখতে আকর্ষণীয় এবং টেকেও অনেক দিন। এসব বোতাম শার্ট, কোট, প্যান্ট, সাফারিসহ বিভিন্ন পোশাকে ব্যবহার করা হয়। খুব ছোট পরিসরে শুরু করা কোম্পানিটির এখন তিনটি কারখানা। মোট ৩২ কোটি টাকার বিনিয়োগ থেকে তারা বছরে বোতামই রপ্তানি করে ২০ কোটি টাকার। এ কাজে মূলত সৃজনশীলতাই প্রধান পুঁজি।
অ্যাগ্রো রিসোর্স কোম্পানি সৃজনশীলতা দিয়ে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির একটি বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এখন তাদের এই কার্যক্রমকে জাতীয়ভাবে এগিয়ে নেওয়া দরকার।
এখনো দেশের অধিকাংশ গবাদিপশুর হাড় ও শিং ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এগুলো বিক্রির সুযোগ না থাকা এর একটি বড় কারণ। যদি দেশে অ্যাগ্রো রিসোর্সের মতো আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে এসব ‘বর্জ্য’ বিক্রয়যোগ্যতা পাবে। স্থানীয়ভাবে এর বাজার গড়ে উঠবে। অন্যান্য শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য যেভাবে আড়ত খোলা হয়, সেভাবে আড়ত গড়ে উঠতে পারবে। সেখানে হাড় ও শিং সরবরাহকারীরা কাঁচামাল হিসেবে সেগুলো বিক্রি করতে পারবে। বিশেষ করে মাংসের দোকানিরা তখন হাড় ও শিং ফেলে না দিয়ে সেগুলো সংরক্ষণ করে এসব আড়তে বিক্রি করতে পারবেন। এতে সামগ্রিকভাবে এই অপ্রচলিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারিভাবে প্রাথমিক পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি।